পদত্যাগে রাজি ভিকারুননিসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি
বাবা-মাসহ শিক্ষকদের আছে অপমানিত হয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে রাজি আছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের নিজের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি।
আশরাফ তালুকদার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। শিক্ষার্থীদের দেয়া ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে আমরা সকল পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ৩ জন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আশরাফ তালুকদারের অভিযোগ তারা প্রতিষ্ঠানটির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন মহলের উসকানিতে কিছু শিক্ষার্থী এখনও আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, এটা আমরা প্রত্যাশা করি না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে যদি আমাকে পদত্যাগ করতে হয় বা সরে যেতে হয় তাতে আমি রাজি আছি।
ভিকারুননিসার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার যে ছয় দফা দাবির কথা জানিয়েছিল তার একটি ছিল- গভর্নিং বডির সকল সদস্যকে অপসারণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের এ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদাধিকার বলে প্রিন্সিপাল হচ্ছে কমিটির সদস্য সচিব। তাকে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব না। এ কারণে আমরা দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করার পর আমি কমিটির পদত্যাগের বিষয়টি বৈঠকে প্রস্তাব করব। সেখানে যদি কেউ দাবি মেনে নিতে চান সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিটির কাউকে পদত্যাগ করানোর বিষয়টি আমার ওপর নির্ভর করে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বজায় রাখতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আশা করেন, শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্লাসে ফিরে আসবেন।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে গতকাল তারা বাবা দিলীপ অধিকারী বলেছিলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গতকাল রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর পল্টন থানায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা দায়ের করেন অরিত্রির বাবা।
এরপর শিক্ষামন্ত্রণালয় ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্তোর নির্দেশ দেয়। রাতে গ্রেফতার হন হাসনা হেনা।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠকে বসেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষকরা। দুই শতাধিক শিক্ষক বৈঠকে উপস্থিত আছেন বলে জানা গেছে। বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসে এ বৈঠক চলছে।
খুরশিদ জাহান মালা নামে ভিকারুননিসার এক শিক্ষক এ বৈঠকের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, আমরা নানভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের মানুষ করি অথচ আমাদের হত্যাকারী বলে ধিক্কার দেয়া হচ্ছে। ঘর-সংসার রেখে আমরা শিক্ষার্থীদের মানুষ করার দায়িত্ব পালন করি।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আগের দিনের চেয়ে কম হওয়ায় আন্দোলনে নামা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তারা। তবে আর আন্দোলনে নামার পক্ষে নন অনেক অভিভাবক। এই অভিভাবকরা বলছেন, আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। নতুন করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে চাই না। আমরা সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানটি গুছিয়ে নিতে চাই।
এমএইচএম/এমএএস/এনএফ/জেআইএম