যেভাবে গ্রেফতার হলেন ভিকারুননিসার শিক্ষিকা হাসনা হেনা
থাকেন মগবাজার এলাকার ডাক্তারের গলিতে। পরিস্থিতি প্রতিকূলে ভেবে পরিকল্পনা করেছিলেন ঢাকার বাইরে যাওয়ার। আশ্রয় নিয়েছিলেন উত্তরার একটি হোটেলে। তবে শেষ রক্ষা হলো না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্যপ্রযুক্তির ফাঁদে ধরা পড়লেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতী শাখার বরখাস্তকৃত শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনা।
বুধবার রাতে তাকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল উত্তরা ইনের একটি কক্ষ থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পূর্ব জোনের একটি টিম।
তিনি ওই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচণার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন নম্বর আসামি। মামলা হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, হাসনা হেনাকে গ্রেফতারে তার মগবাজারের বাসায় নারী পুলিশ নিয়ে অভিযান চালানো হলে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে খুঁজতে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হয়। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর হোটেলে অভিযান চালানো হয়। সেখানে একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরপর নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে মাইক্রোবাসে করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ডিবি কার্যালয়ে আনার পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে অরিত্রির সঙ্গে হাসনা হেনার সর্বশেষ কথাবার্তা, অপর দুই আসামি বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষিকা জিনাত আখতারের সঙ্গে অরিত্রির বাবা-মায়ের কথোপকথনের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরেই তার রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানান তিনি।
ডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে পল্টন থানায় মামলা হওয়ার পর থেকেই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি। বুধবার মামলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবির হাতে আসলে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে স্কুলের অনেকের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তারা, পর্যবেক্ষণ করেন অধ্যক্ষের কক্ষের ভেতর ও বাইরের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ। পাশাপাশি ডিবির আরেকটি দল অভিযুক্ত তিনজনকে নজরদারি শুরু করে। এরই ফলশ্রুতিতে হাসনা হেনাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবির (পূর্ব) উপকমিশনার খন্দকার নুরুন্নবীর বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষকদের গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করে গোয়েন্দারা। হাসনা হেনাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে তোলা হবে।
ডিবির (পূর্ব) সহকারী কমিশনার (এসি) আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এই মামলায় আরও দুইজন আসামি পলাতক এদের মধ্যে জিনাত আখতারের বাড়িতে অভিযান চালালে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে একাধিক টিম কাজ করছে।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রাণ হারায় অরিত্রি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী’ হিসেবে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আখতার ও প্রভাতী শাখার শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে মামলা করেন অরিত্রির বাবা। মামলার পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন। বুধবার তারা কেউ ভিকারুননিসা নূন স্কুলের কোনো শাখায় উপস্থিত ছিলেন না।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরে এই তিনজনকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেন। এরপর সন্ধ্যায় স্কুলের গভর্নিং বডির এক বৈঠকে অধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়।
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।
এআর/জেইউ/বিএ