পুরনো মামলায় নতুন করে গ্রেফতার বিএনপির প্রার্থীরা
আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ শরীক দলগুলো যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত তখন চট্টগ্রাম বিএনপির প্রার্থীরা কারাগারে অন্তরীণ। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের কাছে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করতে দফায় দফায় আবেদন জানালেও পুরনো মামলায় নতুন করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
কারাগারে থাকা নগর বিএনপির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনের প্রার্থী ড. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের প্রার্থী আসলাম চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নেতা চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের গিয়াস উদ্দিন কাদেরকে পৃথক তিনটি মামলায় নতুন করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সর্বশেষ আজ হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীকে আটকের গুজব তুলে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক এস এম শহীদুল্লাহ কায়সার এই আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) বিজন কুমার বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, হাটহাজারীতে নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালে দায়ের হওয়া একটি মামলায় আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমানের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এরপর আসলাম চৌধুরীর আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেছিলেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
এদিকে গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের (গিকা) চৌধুরীকে চার মাস আগে ফটিকছড়িতে বোমাবাজির ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বিস্ফোরক আইনের মামলাটিতে গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি দেন চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম কামরুন নাহার রুমি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) বিজন কুমার বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেয়ার পর আদালতে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা তার জামিনের আবেদন করেন। আমরা এর বিরোধিতা করে আদালতকে জানিয়েছি-বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে। এরপর আদালত জামিন না মঞ্জুর করেন।’
গত ৪ আগস্ট ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের লায়লা নুর ডিগ্রি কলেজ এলাকায় ককটেল হামলার ঘটনায় ফটিকছড়ি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছিল বলে জানান বিজন বড়ুয়া।
গত ৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে আদালত ভবনে পুলিশের ওপর হামলা, জনমনে ভীতি প্রদর্শন, উসকানি এবং সদরঘাট থানার একটি হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণসহ চারটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
শাহাদাতের আইনজীবীরা জানান, বাকলিয়া থানায় অনুরূপ আরও তিনটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হবে। গ্রেফতারের আগে তার বিরুদ্ধে ৪৫টি মামলা ছিল। সবকটিতেই জামিনে ছিলেন তিনি। তাদের দাবি নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পুলিশ একের পর এক গায়েবি মামলায় ডা. শাহাদাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে চলছে।
এছাড়া নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় গত ২২ অক্টোবর দুপুরে নগরের জিইসি মোড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে নভেম্বর মাসের শুরুতে ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
নগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন গ্রেফতার কমেছে, বেড়েছে পুরনো মামলায় নতুনভাবে গ্রেফতার দেখানোর পরিমাণ। পুলিশ মূলত নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের কারাগারে থাকাকে নিশ্চিত করছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নতুন গায়েবি মামলার পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর আগের মামলায় জড়ানো হচ্ছে। সরকার খালি মাঠে গোল দিতেই এসব করছে। মামলার ভয়ে কর্মীদের নিয়ে ভোটের মাঠে নামাটাও এখন দায় হয়ে গেছে।’
নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ধানের শীষের প্রার্থীদের নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ইসি বলছে, তারা লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করছে। অথচ আমরা ইতোমধ্যেই একটি অসমতল মাঠে খেলছি। আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পুলিশ একের পর এক গায়েবি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চলছে।’
তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ(সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমানের দাবি, ‘যাদের আটক করা হচ্ছে বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতেই হচ্ছে।’
আবু আজাদ/জেএইচ/এমএস