উদ্দেশ্যমূলক প্রার্থিতা বাতিলের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ইসি মাহবুব
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তারা যেসব মনোননয়পত্র বাতিল করছেন তা উদ্দেশ্যমূলক কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ইভিএম, নির্বাচন পেছানোসহ কমিশন বৈঠকে বিভিন্ন সময় নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেয়া এই কমিশনার এ বিষয়ে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার এককভাবে কোনো বক্তব্য দেয়ার কথা নয়। এভাবে বলে তো আর লাভ হবে না। যারা আপিল করেছেন বা করছেন, শুনানিতে তারা তাদের তথ্যগুলো উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত কোনো অভিমত আমার নাই। আমরা অবশ্যই ন্যায় বিচারপ্রত্যাশী।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়াদের জন্য আপিলের বুথ পরিদর্শনের সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকরা এ সময় তার কাছে জানতে চান, উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে কিনা এবং আপিলে কমিশন নিরপেক্ষতার পরিচয় দেবে কিনা?
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘তবে আমরা যা কিছু করব, আইন অনুযায়ীই আমাদের তা করতে হবে। কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব আমরা অবশ্যই দেখাব না। প্রতিটি কেসেরই (আপিল) মেরিট আমরা দেখব। আমি যেটা মনে করি, নির্বাচন কমিশন সব ব্যাপারেই একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।’
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজি সেলিম ও পঙ্কজ দেবনাথ নির্বাচন করতে পারবেন কিনা- জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘আমার কথা হলো, এসব অভিযোগের প্রশ্নের উত্তর আমি এই মুহূর্তে দিতে পারি না। এই মুহূর্তে আমি এটার জন্য প্রস্তুত না। আমি কেবল দেখতে এসেছি, যারা আপিল করতে আসছেন, তাদের কোনো অভিযোগ আছে কিনা, জমা দেয়ার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা?’
ন্যায় বিচারের ব্যাপারে কমিশন স্বচ্ছ থাকবে কিনা- এ বিষয়ে মাহবুব তালুদকার বলেন, ‘আমি কখনও বলব না, ন্যায় বিচারের পক্ষে স্বচ্ছ থাকব। ন্যায় বিচার তো আপেক্ষিক বিষয়। এটার উত্তর আমি এখনই দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজন সাজাপ্রাপ্ত হন, পরে আবার তিনি খালাসও পান। সেক্ষেত্রে আমি বলব, ন্যায় বিচার বিষয়টি পুরোপুরি আপেক্ষিক। কোনটা ন্যায় বিচার আর কোনটা ন্যায় বিচার নয়, সেটার বিচারক তো আমি নই।’
রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমিও পত্রিকায় দেখেছি। এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী আপিল করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’
নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি নেই, যদি দুই পক্ষই (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) অভিযোগ করে, আমরা এখন কী বলব? নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি নেই, আমরা এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে দেখতে পারি। তবে, এই মুহূর্তে আমি কোনো কিছু বলার জন্য প্রস্তুত নই।’
মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘যাদের যা কিছু অভিযোগ, লিপিবদ্ধ করে আমাদের এখানে দেবেন, তাদের প্রত্যেকটি অভিযোগের বিষয়ে আমরা শুনানি করব। এরপর আমরা এটার বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। আগামী ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর আপিলের শুনানি হবে। শুনানি শেষে আমরা আমাদের জাজমেন্ট (রায়) দেব। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর আমরা প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেব।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সারাদেশে বিএনপির ১৪১ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাতিল হয়েছে মাত্র তিনটি মনোনয়নপত্র। আওয়ামী লীগের মোট ২৮১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বিএনপির মোট ৬৯৬ প্রার্থী নির্ধারিত সময়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এইচএস/এমএআর/জেআইএম