ভিকারুননিসার শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ!
‘এই পাগল-ছাগলের বাচ্চা, তোরে যে কইছি তুই শুনছ নাই’- উক্তিটি রাজধানীর খ্যাতনামা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষিকার। সম্প্রতি ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে নোট তুলতে না পারায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি এ উক্তি করেন। শিক্ষিকার এমন আচরণে ওই ছাত্রী বাসায় গিয়ে ওই ম্যাডামের ক্লাসে যাবে না বলে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। পরে অভিভাবক অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে ক্লাসে পাঠান তাকে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওই অভিভাবক বলেন, ‘খুব শখ করে মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপক চাপ ও কিছু কিছু শিক্ষিকার দুর্ব্যবহারের কারণে ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা।’
এ অভিভাবকের অভিযোগ, পরীক্ষার প্রশ্ন যে পদ্ধতিতে আসে সে পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হয় না। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রশ্ন করা হয়। এ অভিভাবকের মতো খ্যাতনামা এ স্কুলটির বিভিন্ন শাখার শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে অভিভাবকদের।
অপমান সইতে না পেরে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রির আত্মহত্যার পর স্কুলটির শিক্ষিকাদের দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে অভিভাবকদের অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তবে তারা কেউই পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, স্কুলটিতে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকেই শিক্ষিকারা ছাত্রীদেরকে তাদের কাছে কোচিং করার জন্য প্রলুব্ধ করেন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে। জনশ্রুতি রয়েছে, তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে একাধিক শিক্ষিকার কাছে কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়া হয়। ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিং-এ সাজেশন দেয়া হয়। যারা কোচিং করে তারা ভালো ফলাফল করে। ফলে অভিভাবকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই সন্তানদের কোচিং-এ দেন।
তৃতীয় শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের বোর্ডে শিক্ষিকার লেখা বুঝতে না পেরে কখনও প্রশ্ন করলে শিক্ষিকা তখন রেগে গিয়ে বলেন-‘চোখে দেখিস না, আজই চোখের ডাক্তার দেখাবি। বেয়াদব কোথাকার।’
এ স্কুল থেকে পাস করে গেছে-এমন এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘এ স্কুলে বড় মেয়েকে পড়াতে গিয়ে পড়াশুনা কাকে বলে হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি। তাই সুযোগ থাকলেও ছোট মেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি না করিয়ে সরকারি একটি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস জাগো নিউজকে মঙ্গলবার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞেস করলে শিক্ষক উত্তর না দিয়ে তাকে থামিয়ে দেবে-এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। আমাদের শিক্ষকরা ঠিকমতোই ক্লাস নেন।’
কোচিং প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, কোচিংয়ে উৎসাহী করার প্রশ্নই ওঠে না। অধ্যক্ষের দাবি, ভিকারুননিসার শতকরা পাঁচভাগ শিক্ষকও কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এমইউ/এসআর/জেআইএম