উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের হিড়িক
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে ২০ জনের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগপত্রের অনেকগুলো ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে এসে পৌঁছেছে।
সেগুলো গ্রহণ করে আদেশ জারির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি সুবিধাভোগীরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তাদের পদত্যাগ করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উপজেলা অধিশাখা) অমিতাভ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন। অনেকগুলো আমাদের কাছে এসেছে, আরও আসবে। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পদত্যাগপত্রগুলো চূড়ান্ত করতে হয়, সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’
সাধারণত স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্রগুলো জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে দেয়া হয়। ডিসিরা সেগুলো স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়ে দেন। এরপর পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল মান্নান। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দেলোয়ার হোসেন নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু। বাবলু গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য। তিনি রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। তিনি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আতাউর রহমান আতাও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পাওয়ার পর সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আয়নুল হক স্থানীয় সরকার বিভাগে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন মঠবাড়িয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আশরাফুর রহমান। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। এ জন্য তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে পত্র দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগে।
অপরদিকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান সরকার জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তিনিও পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।
এ ছাড়া টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু। তিনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এর আগে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা, ২ ডিসেম্বর বাছাই এবং ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
আরএমএম/এনডিএস/এমএস