আইনশৃঙ্খলা খাতেই নির্বাচনী বাজেটের অর্ধেক খরচ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য ৪০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ছাড়াই নির্বাচনী বাজেট ধরা হয়েছে ৭৩২ কোটি টাকা। ফলে নির্বাচনী বাজেটের অর্ধেকই আইনশৃঙ্খলা খাতে খরচ হবে।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই বরাদ্দ আগের নির্বাচনী বাজেটের আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। পঞ্চম জাতীয় সংসদে আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দ ছিল ১৭ কোটি টাকা, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে ২৯ কোটি, সপ্তম সংসদে ১৮ কোটি, অষ্টম সংসদে ৪২ কোটি, নবম জাতীয় সংসদে ৯৮ কোটি ও দশম সংসদে ১৮৩ কোটি টাকা।
বুধবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে বৈঠকে করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মূল নির্বাচনী বাজেট ৭০০ কোটি টাকা হলেও এখন পর্যন্ত তিন বাহিনীই চেয়েছে ৫১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসির কাছে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ ও র্যাব ২২৪ কোটি, বিজিবি ৫৮ কোটি ও আনসার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। তবে সশস্ত্র বাহিনী ও কোস্ট গার্ড এখন পর্যন্ত ইসির কাছে কোনো বরাদ্দ চায়নি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পাঁচ বছরে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটা বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বাজেট ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সব আসনে নির্বাচন না হওয়ায় ব্যয় হয় ২৮৩ কোটি টাকা। এবারের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন পর্যন্ত ব্যয় ধরেছে ৭৩২ কোটি টাকা। তবে ইভিএম কেনার খরচ এ বাজেটের মধ্যে নেই।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাজেট-সংক্রান্ত আলোচনা করেছি। আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাজেট দাখিল করতে বলেছি। আমরা আনসার বাহিনীকে অগ্রিম শতভাগ টাকা বরাদ্দ দেব। অন্যান্য বাহিনীগুলোকে দেয়া হবে অগ্রিম ৫০ ভাগ।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর আমরা নতুন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছি। সেটি হলো এ বছর থেকে গ্রাম পুলিশকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করব।’
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার কোন বাহিনী কতদিন ও তাদের কতজন সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নির্ধারণ হবে ১৩ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইসির সভায়। তার আগে গত নির্বাচনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট তৈরির জন্য বলেছে ইসি।
এর আগে ১৫ অক্টোবর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিবিষয়ক ৩৬তম কমিশন সভায় নির্বাচনে বাজেট বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা শেষে হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৭০০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য যেসব বাজেট খাতওয়ারি বিভাজন করে উপস্থাপন করেছি, কমিশন তা অনুমোদন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য চলতি অর্থবছরে মোট ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ কোটি টাকা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খরচ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপরও যদি টাকা লাগে, আমরা সরকারের কাছে চাইব।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই শুরু হবে ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ ডিসেম্বর।
এইচএস/এসআর/জেআইএম