ভূমি অধিকার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয়
দেশের নাগরিকের ভূমি অধিকার শক্তিশালী করতে ২০১১ সালের জুলাই মাসে নেওয়া প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকে প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি সূত্র জানায়, আগের বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘স্ট্রেংদেনিং অ্যাকসেস টু ল্যান্ড প্রপাটি রাইটস ফর অল সিটিজেনস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পটির সর্বশেষ পরিস্থিতি কমিটিকে অবহিত করা হয়। সেখানে জানানো হয়, প্রকল্পটির ৫৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখানো ৪৩ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু সময় আছে মাত্র ৪ মাস। ২০১২ সালের মে মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ কথা রয়েছে।
কাজের এই ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। তারা এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের সঙ্গে জড়িত এনজিও উত্তরণ, কেয়ার ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আলোচনা শেষে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম হীরা সাংবাদিকদের জানান, নাগরিকদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। কিন্ত প্রকল্পের কাঙ্খিত অগ্রগতি হয়নি। কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমিটির সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন করে পরবর্তী সুপারিশ প্রণয়ন করবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে ইউরোপিয় ইউনিয়ন একশো কোটি টাকা ও সরকার ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। প্রকল্পের কাজ হচ্ছে- ন্যাশনাল ল্যান্ড পলিসি অ্যান্ড সাব-পলিসিস, অথোরিটেটিভ ল্যান্ড রেকর্ড, লিগ্যাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ফ্রেমওয়ার্ক অ্যান্ড অডিট, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং পাবলিক অ্যাওয়্যারনেস (জনসচেতনতা বৃদ্ধি)। সকল নাগরিকের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। অবশ্য আগের বৈঠকে এই প্রকল্পের শিরোনাম নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন কমিটি সদস্য জাতীয় পার্টির সাংসদ এ কে এম মাঈদুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, যাদের ভূমি নাই, তাদের কিভাবে ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা হবে। আর প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েছেই।
এদিকে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপর দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভূমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয় হলেও রেজিস্টেশনের দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের। মালিক এক মন্ত্রণালয় রেজিস্টেশন অন্য মন্ত্রণালয় হওয়ায় এ নিয়ে কাজের বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ১ জুন প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিষয়ক উপদেষ্টার নিকট চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে কমিটিতে জানানো হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে ভাওয়াল ও নবাব এস্টেটের যে সমস্ত জমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে তা অনতিবিলম্বে ১ নং খাস খতিয়ানভূক্ত করতে বলা হয়েছে। আর যে সমস্ত জমি দখলে নেই তা দখলে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম হীরার সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সামছুল আলম দুদু, এ কে এম মাঈদুল ইসলাম ও গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/আরএস/আরআইপি