মিনিটে ৩০ সিডি কপিরাইট!
সিনেমা-নাটক ও বিভিন্ন গানসহ ইন্টারনেট থেকে অশ্লীল ছবি সংগ্রহের পর পাইরেসি করে নতুন সিডি বানিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে আসছে একটি অসাদু চক্র। অর্ধশত জনের চক্রের মূলহোতা গিয়াস উদ্দিন এ সিডি রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। চক্রটি মিনিটেই ৩০টি সিডি কপিরাইট করার জন্য আধুনিক ৬টি কপিরাইটার মেশিনও ব্যবহার করে আসছিল।
রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন ও কদমতলী এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক পাইরেটেড সিডি, সিডি কপি রাইট মেশিন ও পাইরেসির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ ২৭ জনকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব জানায়, রোববার রাতে পরিচালিত অভিযানে একটি ল্যাপটপ, ৩৫টি কম্পিউটার মনিটর, ৩৩টি সিপিইউ, দুটি ইউপিএস, ৬টি সিডি কপিরাইট মেশিন, ১৯ হাজার ৭৬৪টি পাইরেটিড সিডিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে র্যাব-৩।
এ সময় আটক করা হয় গিয়াস উদ্দিন (২৭), মো. শাহিন (২৮), মো. রায়হান উদ্দিন (২৬), টিপন চন্দ্র হাওলাদার (২৬), তারেক হোসেন (২০), সম্রাট হোসেন (২১), মিজানুর রহমান (২২), সোহাগ হোসেন (৩০), নূর উদ্দিন (৪০), মো. রানা (২২), রাকির হোসেন (২৩), নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া (২৪), শেখ সালাহ উদ্দিন (২৮), মো. জাফর (৩০), মামুন হোসেন (২২), আব্দুল আল মামুন (২৫), রোকন উদ্দিন (২৮), মো. অপু (২৬), মো.মনির (২০), মো. রায়হান (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (২১), আকবর হোসেন (২২), নাইমুল ইসলাম (১৯), পিন্টু মিয়া (২৪), মো. শাকিল (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৪) ও আনোয়ার হোসেন (২৪)।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান।
তিনি বলেন, পাইরেসি ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে র্যাব-৩ এবং চলচ্চিত্র অশ্লীলতা ও পাইরেসিবিরোধী টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে ফকিরাপুল এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক পাইরেটেড সিডি ও সরঞ্জামাদিসহ আসামি গিয়াস উদ্দিনকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ২৬ জনকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, আটক ২৬ জনই গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে পাইরেটেড সিডি সংগ্রহ করতো এবং এ কাজে তাকে সহায়তা করতো।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এ ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের কারণে বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অশ্লীলতা প্রচারের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন যুব সমাজকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অপসংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে। এতে ইন্ডাস্ট্রিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কেন পাইরেসি বন্ধ করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইরেসি ব্যবসা খুব সহজ একটি ব্যবসা। একটি সিনেমা, গান ইউটিউব বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট থেকে ডাউনলোড করে সেটি কপিরাইড করে থাকে তারা।
এ ক্ষেতে তাদের একটা সিডিতে খরচ হয় ৭ টাকা। পাইরেটেড এ সিডিটি অধিক মূল্যে বাজারে ছাড়ে তারা। এ পাইরেসি বন্ধে আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। এছাড়াও সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমার নির্মিত ২৩টি চলচ্চিত্রের কোনোটিও পাইরেসির হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এ পাইরেসি রোধ করতে র্যাব সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ পাইরেসির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলে আমাদের এ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি অনেক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে।’
জেইউ/এনডিএস/আরআইপি