মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা, জাতিসংঘে প্রস্তাব গৃহীত
মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে চীন, রাশিয়াসহ ১০টি সদস্য। আর প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে মোট ১৪২টি দেশ। জাপানসহ ২৬টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।
শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দফতরে সদস্য দেশগুলোর উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে এই রেজুলেশন গৃহীত হয়। যৌথভাবে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ওআইসি। তাদের পক্ষে প্রস্তাবটি পরিষদের সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রিয়া, মেক্সিকোসহ মোট ১০৩টি দেশ ছিল এ প্রস্তাবের কো-স্পন্সর।
জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সবরকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানাবে পরিষদ। এসব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন। তদন্ত করা হবে সব দায়ী ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে।
রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য ২০১৮ সালে তহবিলের বিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য পরামর্শ দেবে পরিষদ। ভোটে যাওয়ার আগে রেজুলেশনটির যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওআইসির পক্ষে তুরস্ক ও ইইউর পক্ষে অস্ট্রিয়া বক্তব্য দেয়। তাদের বক্তব্য সমর্থন করে রেজুলেশনের পক্ষে ভোটদানের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ।
ভোটগ্রহণের আগে ও পরে দেয়া বক্তব্যে প্রায় সব সদস্য দেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অব্যাহতভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের অবদানের কথা উল্লেখ করে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে রেজুলেশনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এই রেজুলেশনকে সমর্থন করতে সদস্য দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।
১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা মিয়ানমারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের ছাড়পত্র অনুযায়ী কিছু রোহিঙ্গা পরিবার ও সদস্যদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেনি এবং একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত হয়নি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ব্যতীত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।
তিনি বলেন, ‘অতএব রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা বিধানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবশ্যই মিয়ানমারে বাধাহীন প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ধরে রাখা বা জোর করে ফেরত পাঠানো- এর কোনোটিতেই একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ নেই।
জেপি/বিএ/জেআইএম