৫৬ বছর পর চট্টগ্রাম নগরের জন্য প্রথম পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প
স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার গোড়াপত্তন হলেও প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর পর প্রথমবারের মতো বন্দরনগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বুধবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প’ শিরোনামে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে নগরের সকল পয়োবর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। একইসঙ্গে তা ট্রিটমেন্ট করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হবে। ফলে সেপটিক ট্যাংকবিহীন নগরী হবে চট্টগ্রাম।
প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৭২ হাজার বাসাবাড়ি থেকে পয়োনিষ্কাশন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ এবং ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন বসানো হবে। এছাড়া পয়োনিষ্কাশনে একটি আলাদা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। পাহাড় ও বস্তিসহ যেসব জায়গায় পাইপলাইন বসানো যাবে না, সেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে পয়োবর্জ্য নিয়ে আসা হবে এ প্ল্যান্টে। এটার ধারণক্ষমতা হবে দৈনিক ৩০০ ঘনমিলিমিটার। দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার একটি পয়োশোধনাগারও নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে নগরের হালিশহরের আনন্দবাজারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৬৫ একর জায়গায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রান্নাঘরের পানি, গোসলখানার ব্যবহার্য পানি, টয়লেটের পানি ও বর্জ্য প্রকল্পটির আওতায় আসবে। অর্থাৎ পানি এবং বর্জ্যগুলো স্যুয়ারেজ পাইপলাইনে চলে যাবে। এর মধ্যে পায়খানার বর্জ্য শোধনে ফিকেল স্ল্যাজ শোধনাগার স্থাপন করা হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা নেই। বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক ২৮৮ মিলিয়ন লিটার পয়োবর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। যা ২০৩০ সালে ৫১৫ মিলিয়ন লিটারে পৌঁছবে। ওয়াসার প্রকল্পটির আওতায় প্রথম পর্যায়ে ১০০ মিলিয়ন লিটার পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।’
এছাড়াও চট্টগ্রামের আরও দুটি প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেকে। সেগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ‘বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প (সংশোধিত)’ ও চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন।
নগরীর বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আলোচিত প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ এবং অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। মেয়াদ চলে যাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি সংশোধিত হয়ে এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা খরচ নির্ধারণ করে আজ একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নতুন খালটি নগরীর বহদ্দারহাট বারইপাড়ার চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ আমানত রোড হয়ে নুরনগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
আবু আজাদ/বিএ