চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট, রান্না হচ্ছে মাটির চুলায়
কারিগরি সমস্যায় প্রায় তিনদিন ধরে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হলেও চরম গ্যাস সংকট নগরজুড়ে। গ্যাস সংকটে আবাসিক এলাকায় চলছে হাহাকার। বন্ধ রয়েছে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কারখানার উত্পাদনও। এতো কিছুর পরেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই।
গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরুর পর চট্টগ্রামে দৈনিক ২৮০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। হঠাৎ করে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রামের সব পর্যায়ের গ্রাহক।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (কেজিসিএল) সূত্র জানায়, মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালে সরবরাহের প্রক্রিয়ায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে শনিবার রাত ১টা থেকে চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কারিগরি সমস্যা এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কেজিসিএল জানিয়েছে, মহেশখালী টার্মিনাল থেকে আসা এলএনজিসহ চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩৭০-৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হতো। কিন্তু এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় গতকাল রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় বিদ্যুৎ উত্পাদন বন্ধ রয়েছে। এলএনজি সরবরাহ শুরুর পর রাউজানের একটি ইউনিট ও শিকলবাহায় দু’টি ইউনিটে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়েছিল। এই তিনটি ইউনিট থেকে দৈনিক প্রায় ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন হয়ে থাকে। তবে সিইউএফএল ও কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
কেজিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এলএনজি সরবরাহ কবে চালু হবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ দেয়া হতো এলএনজি সরবরাহের পর তা দেশের অন্য এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে ওই সব এলাকায় হঠাৎ করে সরবরাহ বন্ধ করা যাবে না। তাই সরবরাহ সমন্বয় করে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে সময় লাগবে।’
এদিকে এলএনজি বন্ধের কারণে গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রামে আবাসিক ও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। পাইপ লাইনে চাপ কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানায় উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস না পাওয়া ও চাপ কম থাকায় নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকদের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
দিনের বেলায় শিল্প কারখানা চালু থাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি আবাসিক গ্রাহকদের। চট্টগ্রাম নগরের অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে টিমটিম করে। অনেক এলাকায় চুলা জ্বলছে না বললেই চলে। বিশেষ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সংকট তীব্র।
কেজিসিএল’র কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, নগরের চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বাদুরতলা, চকবাজার, পাঁচলাইশ, খুলশী, লালখান বাজার, ফিরিঙ্গি বাজার, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, শুলকবহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহকদের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
নগরের চান্দগাঁও আবাসিকের গৃহিণী মনোয়ারা বেগম গতকাল থেকে গ্যাসের চুলা ব্যবহার করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সারাদিন গ্যাস থাকে না। গভীর রাতে পরদিনের রান্না করে রাখতে হয়। এটা অসহনীয়।’
বাকলিয়ার বাসিন্দা ফারুক মিয়া জানান, সমস্যা মেটাতে আলাদা সিলিন্ডার কিনেছেন তিনি। কেউ কেউ বলেছেন, তাদের রান্নার জন্য মাটির বা কেরোসিন চুলার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
আবু আজাদ/জেএইচ/পিআর