এক সভায় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের রেকর্ড একনেকের
>> সাড়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকার ৩৯ প্রকল্প অনুমোদন
>> উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই ঘনঘন একনেক বৈঠক
>> উন্নয়নের গতি থামানো যাবে না : পরিকল্পনামন্ত্রী
>> ‘নির্বাচন চলবে, আবার উন্নয়নও হবে’
একনেকের এক সভায় উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের রেকর্ড গড়লো এই সরকার। রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ৩৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এর আগে গত মঙ্গলবার ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক।
রোববার অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৮৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি’র (বাংলাদেশ সরকার) ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
রোববার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১৩তম একনেক সভায় মোট ৪০টি উন্নয়ন প্রকল্প তুলা হয়। অনুমোদন পায় ৩৯টি। একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন তথ্য জানান।
নির্বাচনের আগে এতো প্রকল্পের অনুমোদনের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, উন্নয়নে সাধারণত বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন না। তাই সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া আমরা উন্নয়নের মাধ্যমে এমন পথ তৈরি করতে চাই, যাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরাও এই পথেই হাঁটতে পারেন। পরিবেশ তৈরি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নের গতি থামানো যাবে না। নির্বাচন চলবে, আবার উন্নয়নও হবে। কোনোটির জন্য কোনোটি স্থগিত করা ঠিক নয়। উন্নয়ন অব্যাহত রাখতেই ঘন ঘন একনেক বৈঠক এবং বেশি বেশি প্রকল্প অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনের দিন ছুটিও ঘোষণা করা হয় না। সবাই ভোট দিয়ে অফিসে চলে যান। সেখানে তো কোনো সমস্যা হয় না।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, পল্লী অবকাঠামো, দারিদ্র্য বিমোচন এবং গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে বেশকিছু প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর ঢাকার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে আলাদা আলাদা প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, গ্রামীণ সড়কে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু কালভার্ট নির্মাণ, গ্রামীণ মাটির রাস্তাগুলো টেকসই করতে হেরিংবোন এবং গ্রাম সড়ক উন্নয়নের প্রকল্পগুলোও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার পাঁচটি পৌরসভা, ফরিদপুর শহরেরটেপাখোলা লেক উন্নয়ন, টাঙ্গাইল জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন, সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের নতুন প্রকল্পও অনুমোদন পেয়েছে রোববারের একনেকে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, ঢাকায় কর্মরত পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং অভিযানে সক্ষমতা বাড়াতে যানবাহন ক্রয়সহ মোট পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের প্রযুক্তি ও কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে অনুমোদন পেয়েছে আরেকটি প্রকল্প। বাংলাদেশ পুলিশের অভিযানের সক্ষমতা বাড়াতে ৯৯৪টি যানবাহন কেনার প্রস্তাব দিয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এসব গাড়ি ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পুলিশের ৫০ হাজার জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ অবস্থায় পুলিশের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম বাধা যানবাহনের এই ঘাটতি। এ জন্য অতি দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের আবাসিক সংকট নিরসনে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নয়টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ প্রকল্পেরও অনুমোদন হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে ৩৩ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। কিন্তু ঢাকায় কর্মরত এ বিশাল পুলিশ বাহিনীর জন্য চাহিদার তুলনায় আবাসন সুবিধা অপ্রতুল। এ কারণে প্রকল্পের আওতায় নয়টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।’
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকার গুলশানে আবাসিক ভবন নির্মাণে ১১৯ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য নির্মাণ করা হবে ১৬ ও ১৪ তলার আবাসিক ভবন। এসব ভবনে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা হবে ৫২টি। বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণে ৩৫৪ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাবও একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। অন্যদিকে, হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতেও একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এমএ/জেডএ/জেআইএম