শুধু মানুষের কথা চিন্তা করে সংলাপে বসেছি : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পারুক, তাদের মনমতো সরকার বেছে নিক- এসব বিষয় চিন্তা করে আমরা সংলাপে বসেছি। অথচ তারা সংলাপের পাশাপাশি আন্দোলনেও যেতে চায়। তাদের এই পলিসি আমাদের কাছে বোধগম্য না। জানি না, দেশবাসী জাতি এটা কীভাবে নেবে?
শনিবার বিকেলে ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সিমিন হোসেন রিমি ও এ কে এম রহমতুল্লাহ। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হোক, আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন সামনে রেখে যখন ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিল আমাদের সাথে দেখা করতে, তখন আমি সাথে সাথে স্বাগত জানালাম। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও যারাই দেখা করতে চাচ্ছে, আমরা করছি। ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট- দুটো গ্রুপের সাথে আমাদের মিটিং হয়ে গেছে। এরপর আরও সকলের সাথে আমরা করব। যারা আলাপ করতে চেয়েছে, সংলাপ করতে চেয়েছে, আমরা করেছি। একটা সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারা যে সমস্ত দাবি-দাওয়া দিয়েছে, যে সব দাবি-দাওয়া আমাদের পক্ষে করা সম্ভব, আমরা বলেছি সেটা করব।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, রাজবন্দিদের তালিকা দেন। তাদের প্রতি যদি কোনো খুনের মামলা না থাকে, কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স তারা করে না থাকে, তাহলে অবশ্যই আর আমরা কাউকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করি নাই। তাই যদি করতাম, তাহলে খালেদা জিয়া যখন ২০১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে মানুষ মারল, তখনই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। সেটাও তো আমরা করিনি। কাজেই আমরা তো রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করিনি।
খালেদা জিয়া ও তারেকের দুর্নীতি ‘আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক জিয়ার জন্য তো আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, আর খালেদা জিয়ার জন্য কয়েকটি কেইসে তারা সাক্ষী দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে। আন্তর্জাতিকভাবেও প্রমাণিত যে এরা দুর্নীতিতে জড়িত।
দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রায় ছয় হাজারের মতো নির্বাচন হয়েছে। ইউপি নির্বাচন, পৌর নির্বাচন, উপনির্বাচন হয়েছে; কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। গঠন করার আগে সার্চ কমিটি হয়েছে। সার্চ কমিটিতে প্রত্যেকটা দলের পক্ষ থেকে নাম গেছে। আমরা যেমন নাম দিয়েছি, বিএনপিও দিয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। এই কমিশন নিয়ে তো প্রশ্ন থাকতে পারে না।
জেলহত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জেলহত্যার বিচার যেদিন করতে পারলাম, সেদিন মনে হলো বাংলাদেশ যেন অভিশাপমুক্ত হলো। যেদিন এই মামলার রায় হলো, সেদিন বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর এই ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এলো, তাদের আসল রূপ বের হলো। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল। আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। অথচ খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আবার তাদের চাকরি দেন এবং প্রমোশনও দেন। একজন বিদেশে মৃত্যুবরণ করেন, খালেদা জিয়া তাকেও প্রমোশন দিয়ে পেনশনের সব সুবিধা দেন। এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খালেদা জিয়া খুনি রশীদ ও হুদাকে সংসদে বসায়। যে চেয়ারে সংসদের বিরোধী দলের নেতা বসেন, সেই চেয়ারে খুনিকে বসিয়েছিলেন তিনি। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করি, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করি। এই বিচারগুলির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হয়েছে।
কিছু মানুষ দেশের ভালো চায় না জানিয়ে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখনও কিছু মানুষ আছে, বাংলাদেশের মানুষকে খুশি দেখছে তাদের ভালো লাগে না।
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের জুবিলি মাঠে আমাদের ওপর যে পুলিশ গুলি করলো, সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে খালেদা জিয়া পরে প্রমোশন দিল। এ রকম আরও অনেক ঘটনা। তারপরও ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে আমি নিজে তাকে ফোন করেছি। আমার এডিসিকে দিয়ে ফোন করিয়েছি। তিনি ফোন ধরেননি। তিনি ফোনও করেননি। এক পর্যায়ে আমিই ফোন দেই আবারও। তারপর যে ঝাড়ি খেলাম, তা আপনারা জানেন।
এফএইচএস/বিএ/জেআইএম