মেশিনে কাগজ দিলেই ইউরো!
কালো কাগজের সাথে আসল ইউরো মিশিয়ে মেশিনের ভেতর রাখলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে আসল ইউরো। এ ব্যবসায় আয় করা যাবে অনেক টাকা। এমন প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে দেশি-বিদেশি যৌথ একটি প্রতারক চক্র। সম্প্রতি এ চক্রের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২৮ অক্টোবর (রোববার) রুহুল আমিন নামে এক ব্যবসায়ী বাদি হয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলায় ব্যবসার কথা বলে ৯৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। ওই মামলার ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটকের পর এমন অভিনব জালিয়াত চক্রের তথ্য পেয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ।
গত বুধবার রাতে রাজধানী উত্তরা থানাধীন হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- আবুল হোসেন ওরফে পঙ্কজ শর্মা (৪২) ও ক্যামেরুনের নাগরিক এলেক্স টেনে ওরফে পেট্রিক (৪৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থাকা একটি প্রাইভেটকার (প্রিমিও), একটি ইলেক্ট্রনিক্স লকার, একটি কাঠের বক্স ও ১২ বান্ডিল কালো কাগজ জব্দ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, চার মাস পূর্বে মো. রুহুল আমিন নামে এক ব্যবসায়ী কাজের জন্য রাজধানীর খিলক্ষেত্রে অবস্থিত হোটেল লা মেরিডিয়ানে যান। সেখানে পরিচয় হয় আবুল হোসেন ওরফে পঙ্কজ শর্মা ও পেট্রিকের সাথে। পরিচয়ের সুবাদে আবুল হোসেন ক্যামেরুনের নাগরিক এলেক্স টেনে, মাইক ও পিটার মিলে ফাঁদ পাতেন। আলাপচারিতার সুযোগে রুহুল আমিনকে ব্যবসার প্রস্তাব দেন।
প্রথমত মুরগীর ফার্ম, গরুর খামার এবং তেলাপিয়া মাছের ফিসারিতে অনেক লাভ হবে এবং এসব মুরগী, গরু ও তেলাপিয়া মাছ বিদেশে (ক্যামেরুন) রফতানি করে অনেক টাকা আয় হবে বলে প্রলোভন দেখায়। তবে অল্প সময়ে সাদা কাগজে ইউরো মিশিয়ে আসল ইউরো তৈরির জালিয়াতির কৌশলও জানানো হয়।
প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে রুহুল আমিন গত ৯ জুন রাতে ১৮ লাখ টাকা দেয়। পরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা ও মুক্তাগাছায় কয়েকটি তেলাপিয়া মাছের খামার দেখিয়ে গত ২০ আগস্ট ৪০ লাখ এবং ২৮ আগস্টা ৩৮ লাখসহ মোট ৯৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এরপর হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান প্রতারকরা। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে বাড্ডা থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।
গ্রেফতার আবুল হোসেন ওরফে পঙ্কজ শর্মা জানিয়েছেন, মেশিনের মাধ্যমে কালো কাগজের সাথে আসল ইউরো মেশিনের ভেতর রাখলে আসল ইউরো তৈরি হবে। এই ব্যবসায়ে অনেক টাকা আয় করা যাবে বলে তারা প্রলোভন দেখায়। তারা বিভিন্ন সময় দামী গাড়ী নিয়ে ভুক্তভোগীর সাথে দেখা করতেন। ব্যবসার ব্যাপারে আলোচনা করতেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর ডিবি) গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমান বন্দর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহররম আলী বলেন, মামলাটি থানা থেকে গোয়েন্দা বিভাগে স্থানান্তর হলে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ দিয়ে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ।
বুধবার রাতে রাজধানী উত্তরা থানাধীন হাউজ বিল্ডিং এলাকা থেকে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারণা মামলায় মাইক ও পিটার নামের দুই প্রতারক পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা আবুল হোসেন। তিনি মূলত ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী হিসেবে পঙ্কজ শর্মা নামে মিথ্যে পরিচয় দিতেন। আর তার সাথে গ্রেফতার ক্যামেরুনের নাগরিক এলেক্স টেনে ওরফে পেট্রিক ও পলাতক মাইক ও পিটার দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা ও জালিয়াতি করে আসছিল।
গ্রেফতার আবুল হোসেন ও পেট্রিককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের এক দিনের রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেইউ/আরএস/পিআর