শীর্ষ নেতাদের কারামুক্ত করতে সক্রিয় জেএমবি
২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ২০০৭ সালে শীর্ষ ছয় নেতার ফাঁসির পর দেশ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয় সংগঠনটি। তবে বর্তমানে নানা কৌশলে আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা থেকে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামিরা জানায়, তারা কারাগারে থাকা জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা সাঈদুর রহমান ও শীর্ষ নেতা মুফতি জসিমউদ্দিনকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল।
গ্রেফতারকৃতরা দেশের ছয়টি বিভাগে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জেএমবিকে পুনর্গঠনের কাজ করছিলেন বলে জানায় পুলিশ। এদের মধ্যে সাখাওয়াত উল্লাহ নামের একজন জেএমবির আইটি এক্সপার্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি অনলাইনে জেএমবির প্রচারণা চালাতেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গোপন বৈঠকের মাধ্যমে নতুন দল গঠনের কাজ করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের মতো পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
এ বছর সন্ত্রাস দমন আইনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০০৫ সালে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবি, হুজিসহ চারটি জঙ্গি সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হয়। একই অপরাধে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হয় হিজবুত তাহরির।
গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জেএমবিসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), হিজবুত তাহরির, ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) সদস্যরা একজোট হয়ে কাজ করছে। ভিন্ন মতাদর্শী হওয়া সত্ত্বেও নিষিদ্ধ ঘোষণার কারণে এক জোট হয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে তারা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় জানান, সম্প্রতি ফিদা মুনতাসির সাকের নামে আইএসের এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে একই সঙ্গে হিজবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের সঙ্গে নিজের যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছে। এমনকি পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যদের সঙ্গে সভা করার কথা জানায় সে।
ডিবি সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ সংগঠনের জঙ্গিরা একসঙ্গে হয়ে ‘বাংলাদেশ জুনুদআল তাওহিদ ওয়াল খিলাফাহ’ এবং ‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ’ নামে দুটি সংগঠনের নামে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নতুন নামে আসা এসব সংগঠনের সদস্য সংখ্যার বিষয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে অর্থ সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ডাকাতির টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা।
মনিরুল ইসলাম বলেন, সংগঠনগুলো পরিচালনার জন্য জঙ্গিরা বিভিন্ন ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করছে। সাভারের আশুলিয়াতে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টা করে। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করলেও সেগুলো নস্যাৎ করে গোয়েন্দা ও পুলিশ।
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স শাখার পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশের জঙ্গি পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’
এআর/এসএইচএস/বিএ