ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নামে-বেনামে তৎপর জঙ্গি সংগঠন

প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৫

মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে উপমহাদেশে বাংলাদেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। তবে ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় সিরিজ বোমা হামলার পর সে ধারণার আমূল পরিবর্তন আসে। সবাই বাংলদেশকে একটি জঙ্গি প্রবণ দেশে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাকে বড় করেই দেখেছেন। ২০০৭ সালে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ছয় শীর্ষ জঙ্গি নেতার ফাঁসির পর অবশ্য মানুষের সেই ধারণায় স্বস্তি ফিরে আসে।

তবে থেমে থাকেনি দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্ত এলাকাকে ঘিরে জঙ্গি তৎপরতা। গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে হামলা চালিয়ে পুলিশের কাছ থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাই এর বড় প্রমাণ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রিমান্ডে জেএমবির আমির মাওলানা সাঈদুর রহমান গোয়েন্দা পুলিশকে সারাদেশে জেএমবির ৪০০ এহসার সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছেন বলে জানায়। এহসার সদস্যরাই জেএমবির মূল কর্মীবাহিনী। এরা সংগঠনের জন্য সার্বক্ষণিক নিবেদিত। সাঈদুরের দেয়া তথ্য মতে, সংগঠনটির প্রতি সহানুভূতিশীল ও সমর্থক ৫০ হাজারের বেশি লোক এখনো বাংলাদেশে রয়েছে।

এই সমর্থক আর এহসার সদস্যরাই ত্রিশালে ফাঁসির আসামি সালেহীন, বোমারু মিজান ও রাকিবকে ছিনতাই করে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হলে বিশ্বব্যাপি তোলপার শুরু হয়। শুরু হয় বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বৃদ্ধির শোরগোল। ঘটনার পর দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পালিয়ে যাওয়া তিনজনের মধ্যে রাকিব নিহত হন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কৌশল বদলে সক্রিয় রয়েছে জঙ্গি সংগঠনের নেতা কর্মীরা। তারা এখন নাম বদলে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নতুন কয়েকটি জঙ্গিবাদী সংগঠনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও তাদের নিজেদের মধ্যে আদর্শিক দূরত্ব কমই। ঘাপটি মেরে থাকার পর জঙ্গিরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

প্রায় দিনই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরির কর্মীরা রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করছে। সর্বশেষ ১৪ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের সময় রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে নিজেদের দলীয় প্রেস রিলিজ বিলি করেছে তারা।

গোয়েন্দা সংস্থা জাগো নিউজকে জানায়, জেএমবি ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল কায়েদা, লস্কর ই তৈয়বা, হিজবুত তাহরির, ইসলামিক স্টেটস (আইএস), হিজবুত তাওহিদ, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ, পাকিস্তানি লস্কর-ই-তৈয়বা, আরাকানভিত্তিক রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরএনও, নোপাসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো পাহাড়ি এলাকাকে ঘিরে সশস্ত্র অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদ মজুদ করছে। বেশ কয়েকটি এমন আস্তানা আবিষ্কারের পর র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনেরও অস্তিত্ব বাংলাদেশে রয়েছে।

তবে আনসারুল্লাহ, লস্কর ই তৈয়বা, হিজবুত তাহরির, জামায়াতুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করলেও সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে আরো বেপরোয়াভাবে চলছে তাদের কার্যক্রম। শুধু ব্যবহার করছে ভিন্ন নাম।

গত বছর রাজধানীতে গোপীবাগে ছয় খুন ও রাজাবাজারে মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী খুনে জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে তথ্য প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি মুক্তমনা, ধর্ম নিরপেক্ষ লেখক, সাংবাদিক ও বিশেষ করে ব্লগাররা জঙ্গি সংগঠনগুলোর হামলার শিকার হচ্ছেন।

ব্লগার রাজিব, আসিফ মহিউদ্দিন থেকে শুরু করে সর্বশেষ নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত  কমপক্ষে ১০ জন ব্লগার হামলার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ছয়জন।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো তৎপরতা বৃদ্ধি পায়নি। তবে নতুন নামে পুরাতন জঙ্গিদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, র‌্যাব বরাবর দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বন্ধে সফলতা দেখিয়েছে। জঙ্গিদের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি ঘাটি গুড়িয়ে দিয়েছে র্যাব।

জেইউ/এসএইচএস/বিএ