ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন
নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্বাচনী আইন ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অনুমোদনের কথা জানান। খসড়া আইনে একই সঙ্গে ইভিএম অপব্যবহারের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড।
রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির পরও আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রচলতি পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে ইভিএম চালুর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার সংসদ অধিবেশন শেষ হচ্ছে, তাই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের আইন পাস হওয়ার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় এটি কার্যকরের জন্য আইনের অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই আইনটি অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) আকারে জারি হয়ে যাবে। এখন তো সংসদ আর পাওয়া যাবে না।’
তিনি জানান, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওটাকে সংশোধনের জন্য ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৮’ নামে আনা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, ‘যে জিনিসগুলো নতুন আনা হয়েছে, এরমধ্যে মূল বিষয়টি হচ্ছে ইভিএম পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তকরণ। ইভিএমের বিষয়ে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএম ব্যবস্থা প্রবর্তন, ইভিএম অনুমোদন, ইভিএমের সফটওয়্যার অনুমোদন এবং সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কমিশনের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। অনেকগুলো সেফটি মেজার্স এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা ভীতি কাজ করছে- এটার নিরাপত্তা কী হবে, এটা হ্যাকিং হবে কী হবে না, এই শঙ্কাগুলো দূর করার জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলে দেয়া আছে আইনে।’
‘নেটওয়ার্কের সঙ্গে ইভিএমের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। হ্যাকিং করার কোনো সুযোগ এখানে থাকবে না। টেম্পারিং ও ম্যানিপুলেশন প্রতিরোধ সম্পন্ন ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা এক এটা। সব ধরনের প্রিকশান ও সফটি মেজার্স এখানে রাখা হয়েছে। যাতে কোনো নাগরিক ভোট দিতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত না হন’ বলেন শফিউল আলম।
কতটি স্থানে ইভিএম ব্যবহার করতে পারবে, সেটা সংশোধিত আরপিওতে উল্লেখ করা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে কমিশনের উপর এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। ইভিএম কতটুকু কী ব্যবহার করা হবে, সেটা কমিশন নির্ধারণ করবে।’
ইভিএম ব্যবহার বাধ্যতামূলত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অপশনাল (ঐচ্ছিক)।’
ইভিএম অপব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদণ্ড
ইভিএম অপব্যবহারের শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কেউ ইভিএমের অপব্যবহার বা নষ্ট করে তবে সর্বনিম্ন ৩ বছর ও সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।’
সংশোধিত আরপিও বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যবস্থায় মনোনয়নপত্র দাখিলের সাতদিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত বিধানে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্ব পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়েছে। এটার মাধ্যমে প্রার্থীকে একটু ফেসিলেটেড (সুবিধা) করা হলো।’
এটা কেন করা হল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যত সুযোগ বাড়াবেন তত ঋণ খেলাপি কমে যাবে। ক্লিন হয়ে যাবে। আমাদের ঋণ আদায় বেশি হবে।’
অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়া যাবে
প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘বিদ্যমান ম্যানুয়াল ব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটাও একটা বাড়তি সুবিধা দেয়া হলো।’
আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এই খসড়াটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আরপিও সংস্কারের জন্য একটি কমিটি করা হয়। আরপিও সংস্কারের বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নেয়া হয়। মাঠ কর্মকর্তা ও সংলাপে পাওয়া সুপারিশ পর্যালোচনা করে এই কমিটি সুপারিশ তৈরি করে।
এরপর গত ৩০ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের এক সভায় আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। এরপর ভেটিংয়ের (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলিটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে পাঠানো হয়। ভেটিংয়ের পর এটি গত সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।
চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্য থাকলেও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের বিরোধিতা করছে। তাদের আশঙ্কা এই ব্যবস্থায় সরকার ভোট কারচুপি করবে।
এছাড়া এর আগে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে কমিশনের এ সংক্রান্ত বৈঠক ত্যাগ করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
আরএমএম/এমএমজেড/এমএস