ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে চীনের আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছে চীন। শুক্রবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ঝাও কেঝি এই আশ্বাস দেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিকদের কত তাড়াতাড়ি ফেরত নিয়ে যাবে, আমরা অনুরোধ করেছি, তারা (চীন) যেন এ বিষয়ে একটা ভূমিকা রাখে। তারা আমাদের সঙ্গে এগ্রি করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, মিয়ানমারের অধিবাসীরা খুব শিগগিরই ফিরে যাবে। তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে অসুবিধায় পড়েছে এটা তারা ফিল করেছেন। এটা তাড়াতাড়ি সলভ (সমাধান) হবে -এটা তারা বিশ্বাস করে। সেই অনুযায়ী সবকিছু তারা লক্ষ্য রাখবেন, এটা আলোচনার সময় তারা বলেছেন।’

‘এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা আসায় বাংলাদেশ ভিকটিম হয়েছে। বাংলাদেশ একটা ছোট দেশ, তারপরও এদের শেল্টার দিয়েছে -এ জন্য প্রশংসা করেছেন তারা (চীন)।’ -বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখবে চীন? -এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের সঙ্গে যে এগ্রিমেন্টগুলো করেছে সেগুলো যাতে তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন হয় -সেই বিষয়ে তারা সহযোগিতা করবেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার, আমাদের ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে, সেখানে আরও ডিসকাশন হবে, যাতে ইজি করে দেয়া যায় এ জিনিসগুলো।’

তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
বৈঠকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের এজেন্ডা (আলোচ্য বিষয়) ছিল চারটি, কিন্তু দশটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তিনটি ডকুমেন্টস সাইন হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্ল্যান অব অ্যাকশন অন ল এনফোর্সমেন্ট ট্রেনিং কো-অপারেশন, কো-অপারেশন ডকুমেন্ট অব এস্টাবলিস্টমেন্ট জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ, সাইনিং অব লেটার অব চেইঞ্জ অন পুলিশ ইকুয়েপমেন্ট এইড। এ তিনটি ডকুমেন্ট সাইন হয়েছে আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি ও ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম এগুলো নিয়ে আমরা সব সময় কথা বলব। আমাদের প্রতিনিধিরা সেখানে যাবেন, ভিউজ অ্যাকচেইঞ্জ হবে। চীনের সঙ্গে ইন্টিলিজেন্স শেয়ার হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে চীনের ভিসা আরও ইজি করা যায়। আমরা ইতোমধ্যে ইজি করে দিয়েছি, সেটা নিয়ে কথা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদক নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সাইবার ক্রাইম নিয়ে কথা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস নিয়ে কথা হয়েছে, কাউন্টার টেররিজম নিয়ে কথা হয়েছে। তারাও এগ্রি করেছেন যে, এখনও ওয়ার্ল্ডের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ হলো ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ও টেররিজম। এ জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব বলে আলোচনা হয়েছে।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা দেবে -এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুলিশের যেসব ইকুইপেমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো তারা সহযোগিতা করবেন। ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা তারা সবসময় করবেন। এ ছাড়া আমরা যেভাবে চাই সেভাবে তারা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট করেছেন এবং আমরা তাদের ভালো করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি, এ জন্যও তারা প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও ইনভেস্টমেন্ট আসবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল যে কথাবার্তা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেসব বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন, সেগুলো তারা মাথায় রেখে আরও ইনভেস্টমেন্ট আসবে, আরও কো-অপারেশনের ফিল্ড তারা উন্মুক্ত করবে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘প্রত্যেক বছর আমাদের ডিজি লেভেলের ডেলিগেশন ওখানে যাবে, আমাদের কী প্রয়োজন, তারা কী কো-অপারেশন করবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে গিয়েছে সেটার একটা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তারা। এ উন্নয়নের সঙ্গে তারাও আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।’

শুক্রবার সকাল ১০টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ও পার্টি কমিটির সম্পাদক ঝাও কেঝির নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষ হয় দুপুর ১২টার দিকে।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় চীনের জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী সচিবালয়ে উপস্থিত হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় চীনের মন্ত্রীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি দলের সালাম গ্রহণ করেন ঝাও কেঝি।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অধীন সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। চীনের পক্ষে ছিলেন ঝাও কেঝির নেতৃত্বে দেশটির ২৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

আরএমএম/আরএস/এমএস

আরও পড়ুন