দিনে শ্রমিক, রাতে ডাকাত!
রাজধানীতে চাল, চামড়া ও গরু ভর্তি ট্রাক ডাকাতির একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট সনাক্ত করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চক্রের সদস্যরা দিনের বেলায় শ্রমিকের কাজ করেন। এদের কেউ কেউ পিকআপও চালান। তবে রাতে তাদের প্রধান কাজ হলো ডাকাতি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার ও লালবাগ এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা একাধিক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক ডাকাতি মামলা।
গত ২০১৬ সালের ১৬ মে রাজধানীর রমনা থানার মগবাজার এলাকায় চালভর্তি ট্রাক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই এ চক্রের সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ।
প্রায় আড়াই বছরের তদন্তে গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। যাদের মধ্যে একজন মেহেদি হাসান মৃধা ওরফে হাসান (২৪)। যিনি মগবাজারে চাল ভর্তি ট্রাক ডাকাতি মামলায় জামিন নিয়ে লালবাগে চামড়া ভর্তি ট্রাক ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেফতার হন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তিন দফা রিমান্ডে নেয়ার পর আদালতে শেষ পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মেহেদি হাসান মৃধা।
ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারি কমিশনার (এসি) নাদিয়া ফারজানা জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬ সালের ১৬ মে রাজধানীর মগবাজার এলাকায় চাল ভর্তি একটি ট্রাক ডাকাতি হয়। এর পরদিন নিউ হাসিব অটো রাইস মিলের ম্যানেজার আজহারুল ইসলাম রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২১)। পরে রমনা থানা থেকে মামলার তদন্ত শুরু করেন তারা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ মে রাতে ময়মনসিংহের হালুয়া ঘাট থেকে চালক শাহজাহান ও হেলপার সুমন মিয়া চাল ভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকার বাবুবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ফুলপুর আসার পর চালক পরিবর্তন হয়। বদলি চালক ওঠেন মঞ্জুরুল ইসলাম। ১৬ মে দিনগত রাত ২টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল হয়ে মগবাজারের দিকে আসার পথে হাতিরঝিল ফ্লাইওভারের উপর ট্রাকে ডাকাতি হয়। চালক ও হেলপারকে অস্ত্রের মুখে মারধরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় চালকের স্মার্টফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা।
নাদিয়া ফারজানা বলেন, মামলার পর প্রথমে খোয়া যাওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় মাদারীপুর থেকে ডাকাত দলের সদস্য মেহেদি হাসান মৃধাকে গ্রেফতার করে রমনা থানা পুলিশ। কিন্তু তিনি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। জামিনে বেরিয়ে ফের লালবাগে চামড়া ভর্তি ট্রাক ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। পরে মেহেদি হাসানকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে মোট তিন দফায় রিমান্ডে নেয়ার পর তিনি ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি গত মাসে (সেপ্টেম্বর) আদালতে স্বীকার করেন।
জবানবন্দিতে মেহেদি বলেন, ঘটনার দিন আমরা ১০ জন একটি পিকআপ নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে থাকি। আনুমানিক রাত ২টার দিকে মগবাজার এলাকায় একটি চাল বোঝাই ট্রাক আটকে চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ নিই। ট্রাক চালিয়ে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে চাল রেখে তেজগাঁও বিজি প্রেস স্টাফ কলোনির সামনে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে যাই।
মেহেদি জানায়, ওই ডাকাতিতে জড়িত সোহেলের চাচাতো ভাই কেরামতকে সে রাতেই চাল বিক্রির কথা জানালে তার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকার চাল মাত্র ১ লাখ টাকায় বিক্রি করি। ওই চাল বিক্রির টাকার মধ্যে সোহেল ২৭ হাজার টাকার ভাগ দেয় মেহেদিকে। তাদের চক্রের কেউ কেউ দিনে শ্রমিকের কাজ এবং পিকআপ চালায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নাদিয়া ফারজানা বলেন, ডাকাত দলের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ীর যোগাযোগ ও সখ্য রয়েছে। তারা অল্প দামে ডাকাতদের কাছ থেকে মালামাল কিনে রমরমা বাণিজ্য করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম কেরামতকেও গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ মারা গেছেন। মূলত তার নেতৃত্বে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মতিঝিল, লালবাগ এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতি করতো চক্রটি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তিনের অধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। মেহেদিসহ চক্রের গ্রেফতার অপর ৪ সহযোগী হলেন- কেরামত, শমসের ডাকাত, নুরুজ্জামান ওরফে নজু ও কামরুজ্জামান। বাকি ডাকাতদেরও সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেইউ/এমএমজেড/এনডিএস/জেআইএম