পদ্মা সেতুতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একটা সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। সেটা হলো নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত। অর্থমন্ত্রীসহ দুই একজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা ‘ঘোর আপত্তি’ তুলেছিলেন। কিন্তু কারো কথায় কান না দিয়ে জনগণের উপর ভরসা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, দেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে ছিল।’
শনিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে। আমি বিশ্বাস করি একটা শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো জাতি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। তাই শিক্ষাকে আমরা সব সময় গুরুত্ব দেই।
তিনি বলেন, ‘আপনারা তো মানুষ গড়ার কারিগর, আপনারা শিক্ষক। আপনাদের কাছে জাতির অনেক আশা। অবশ্যই আপনারা এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। এটা শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে হবে না। এখানে শিক্ষক, অভিভাবক সবাই মিলে দায়িত্ব নিতে হবে। ছেলেমেয়েরা কার সঙ্গে মিশলো, কোথায় গেলো, তাদের চরিত্র ঠিক আছে কিনা, পড়াশোনায় মনোযোগী কিনা এটা বাবা-মা এবং শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’
নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কলেবর না বাড়িয়ে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। যাতে প্রত্যেক এলাকায় ছেলেমেয়েরা নিজেদের ঘরে বসে পড়াশোনা করতে পারে।’
মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষাকে আমরা মেইন স্ট্রিমে নিয়ে এসেছি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি, পার্থিব শিক্ষার মাধ্যমে তারাও যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজেদের কর্ম উপযোগী করতে পারে, সেটাও আমরা ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকসহ ‘পশ্চিমা বিশ্বের কিছু নেতা’ পদ্মা সেতু নির্মাণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে যা হয়েছে তাতে কষ্ট পেয়েছে আমার ছেলে, কষ্ট পেয়েছে আমার বোনও। বারবার আমার ছেলেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে থ্রেট করা হতো। আমার মেয়েকে ভিসা না দেয়া, অনেক অত্যাচার আমরা সহ্য করেছি, মাথা নত করিনি।’
ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে নোবেল প্রাইজের মত একটা প্রাইজ পেয়ে গেছেন, তাকে এমডির পদটা ধরে রাখতে হবে কেন? সেখানে কী স্বার্থটা আছে? কী আকাঙ্ক্ষাটা আছে?
গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছরের বেশি কেউ এমডি পদে থাকতে পারবে না। যার বয়স ৭০ পার হয়েছে, তিনি এমডি পদ আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। সে সময় ইউনূসকে যে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আদালতের রায় সে সময় ইউনূসের বিপক্ষে যায়। সরে যেতে বাধ্য হন ইউনূস। এরপরও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি ধরে রাখতে তিনি ‘পশ্চিমাদের দিয়ে সরকারের ওপর চাপ দেন’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
নাম উল্লেখ না করে একজন সম্পাদকের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর আমাদের দেশেরই একজন এডিটর, ভালোই ইংরেজি জানেন এবং আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ডও, সাবসিডিয়ারিতে আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড ছিলেনও। আমি ছিলাম বাংলার উনি ইংরেজির। তিনিও তার সঙ্গে দোসর হলেন, আমেরিকাও চলে গেলেন, হিলারির কাছে বহু ই-মেইল পাঠানো হলো এবং তারই প্ররোচনায় হিলারি নির্দেশ দিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করতে হবে।
এফএইচএস/এএইচ