রায় ঘিরে পুরান ঢাকায় কঠোর নিরাপত্তা
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
১৪ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছিল আলোচিত সে মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ বুধবার। এ রায় ঘিরে কাক ডাকা ভোর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৭টায় সরেজমিন বকশিবাজার, চাঁনখারপুল, চকবাজার ও লালবাগ ঘুরে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। ব্যারিকেড বসিয়ে যান ও জনচলাচল বন্ধ করা হচ্ছে। সময় যত গড়াতে থাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা তত জোরদার করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা জোরদারের ফলে সমস্যায় পড়েছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। চকবাজারের মো. কুদ্দুস মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘রায়ের কারণে ব্যবসা লাটে উঠবে আজ।’
`আম্মু, এখানে এতো পুলিশ কেন? স্কুল ছুটির পর কি বাসায় ফিরতে পারব।’ সাত সকালে বাসার অদূরে পুলিশের ব্যারিকেড দেখে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের শুক্কু মিয়ার গলির বাসিন্দা এক গৃহবধূকে তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে এমন প্রশ্ন করে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় ১ নম্বর অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে আরও ২০ জনের।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।
২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।
তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ৩১ জন।
মামলার ৪৯ আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল হক, খোদা বক্স চৌধুরী ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমানসহ ৩১ জন কারাগারে আটক আছেন।
অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিনসহ ১৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
এমইউ/এনডিএস/পিআর