ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনোয়ারের ‘হত্যাকারী’র বিচার চাইলেন সহকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৩৯ পিএম, ০২ অক্টোবর ২০১৮

বাসের চাপায় নিহত একাত্তর টিভির মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে ‘হত্যাকারী’ ভিআইপি পরিবহনের চালক ও মালিকের শাস্তি দাবিতে সড়কে মানববন্ধন করেছেন সংবাদকর্মী ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে সোয়া ৫টা পর্যন্ত কারওয়ান বাজারের তিতাস গ্যাস ভবনের পাশের সড়কের এক কোণে অবস্থান নেন তারা। এসময় সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক ছিল। মানবন্ধনটির আয়োজন করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন (ইমা)।

এসময় ইমা’র সভাপতি আক্তার হোসেন বাবু বলেন, ‘শুধু এক আনোয়ারের জন্য নয়, আমরা সকলের জন্য নিরাপদ সড়ক চাই। প্রতিটি মানুষ নিরাপদ সড়ক চায়। এজন্য আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই কাজ করে যেতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার যেন রাস্তায় নামতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিরাপদ সড়কের জন্য শুধু নীতিমালা করে লাভ হবে না যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আনোয়ারের ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আর কারও কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, আমি শুধু আমার ভাইকে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আজ সকালে সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করতে রমিজউদ্দিন স্কুলের ওই সড়কটিতে গিয়েছিলাম। দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে অসংখ্য বাস দরজা খুলে চলাচল করছে। একজন পুলিশ ভাইকে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলে তিনি কয়েকটি বাস থামান। এর মধ্যে একটি বাস শুধু দরজা খুলে চলাচলের কারণে ৬ বার মামলা খেয়েছে। এই হচ্ছে আমাদের চিত্র। বিদেশে এক অপরাধ পরবর্তীতে করলে দুইগুণ-তিনগুণ সাজা হয়। একসময়ে যানবাহনটি আটক করা হয়, চালককে আটক করা হয়। আমাদেরও তেমন ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু নিরাপদ সড়কের জন্য পথচারী ও চালক সবাইকেই সচেতন হতে হবে। মোটরসাইকেল চালকরা বাম লেন বন্ধ করে দেয় এই রীতি বন্ধ করতে হবে।’

আনোয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, একটি সিএনজিকে চাপা দিয়ে পালানোর সময় বাসটি আনোয়ারকে চাপা দেয়। এটি অবশ্যই ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা কিংবা খুন এর পর্যায়ে পড়ে।

Anwar-2

মানববন্ধনে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশুরা পর্যন্ত সড়কে আন্দোলন করেছে। এরপরও সড়কে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছেই। আনোয়ার বা তার পরিবার কী জানতো সে আর বাড়ি ফিরতে পারবে না, সে রাস্তায় হত্যার শিকার হবে। আমি হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি। আনোয়ার বাসটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে ছিল। কিন্তু বাসটি একটি সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে তাকেও ধাক্কা দিয়েছে। তাকে রাস্তায় খুন করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন বাসটি কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে সড়কে চলছিল? সড়কে এসব খুনের পেছনে যারা দায়ী তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছেন তাদেরকেই নিহত পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। আনোয়ারকে হত্যার পেছনে যারা যারা প্রকৃত দায়ী তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

ইমা’র সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তারেক বলেন, আপনারা যদি সেদিনের দৃশ্যটা দেখতেন তাহলে বুঝতে পারতেন কতটা নির্মমভাবে সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে আনোয়ারকে হত্যা করেছে বাসটি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন আর কতগুলো মৃত্যু হলে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন যানচলাচল বন্ধ হবে? আর কত মৃত্যু হলে লাইসেন্স ছাড়া চালক গাড়ি চালাবে না? আমরা আনোয়ারকে হত্যার জন্য ভিআইপি পরিবহনের বাসের চালক-মালিকের বিচার চাই। আমরা চাই আনোয়ারের পরিবারকে সরকারিভাবে পুনর্বাসন করা হোক।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে মহাখালীর জাহাঙ্গীর গেটের সামনে বাসচাপায় আনোয়ার হোসেন নিহত হন। গাজীপুর থেকে নিউমার্কেট রুটে চলা ভিআইপি পরিবহনের বাসটি গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিল। জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় মহাখালী ফ্লাইওভারের দিকে একটি সিএনজিকে চাপা দেয়ার পর ডানে ঘুরতে গিয়ে বাসটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এসময় ছিটকে পড়েন আরোহী আনোয়ার। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এসময় ভিআইপি পরিবহনের চালক সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

এই ঘটনায় নিহতের শ্যালক তৌফিক আহম্মেদ কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার এসআই আশরাফুল আলম চালককে আদালতে সোপর্দ করে দুইদিনের রিমান্ডে নেন।

উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর একাত্তর টেলিভিশনের মার্কেটিং বিভাগে এক্সিকিউটিভ পদে যোগ দেন। ২০১২ সালে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেন তিনি। ২০০৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে তিনি মনোবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই থানার পঞ্চগ্রামে।

এআর/এসএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন