ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

‘২০ বস্তা ছাই পেলাম, আর কিছুই নাই’

আদনান রহমান | প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীর কড়াইল বস্তির মসজিদ রোডের জি কে এন্টারপ্রাইজ নামে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান ও একটি গুদামের মালিক বিপ্রদেব দাস। রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দিনের আলোর অপেক্ষা না করে খুঁজে চলেন তার মূল্যবান জিনিসপত্র। একে একে ২০টি বস্তা ছাই দিয়ে ভরেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো মালামাল অক্ষত অবস্থায় পাননি তিনি। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা। কিছু না পেয়ে হতাশ বিপ্রদেব বসেছিলেন দোকানের ধ্বংসস্তূপের ওপর।

তার মতো অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন শনিবারের আগুনে। এদিন রাত সাড়ে ১০টায় বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং বস্তিবাসীদের দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিপ্রদেব দাস জাগো নিউজকে বলেন, আমার হার্ডওয়্যারের দোকানে স্ক্রু থেকে শুরু করে রিকশার বিয়ারিং, রং, পলিশ, সব ধরনের পার্টস, মাল্টিপ্লাগ বিক্রি করি। নিচতলায় দোকান, দোতলায় গোডাউন। বস্তির সবচেয়ে বড় দোকানটিই আমার। আগুন মুহূর্তের মধ্যেই নিঃস্ব করে দিল আমাকে।

korail1

তিনি বলেন, দোকান আর গুদামে মোট ২০ লাখ টাকার মাল ছিল। আগুনে দোকান পুড়ে ছাই। দোকানের এক কোণের ছাই দিয়ে ২০টি বস্তা ভরলাম। সবমিলে এই ২০ বস্তা ছাই পেলাম, আর কিছুই নাই। মূল্যবান কিছুই পেলাম না।

বস্তির যে বাড়িটি থেকে আগুনের সূত্রপাত তার মালিক নুরুল আমিন পেশায় একজন মুদি দোকানদার। ঘর থেকে ২০০ গজ দূরেই তার দোকান। আগুনের শব্দ শুনে তৎক্ষণাৎ ছুটে এলেন ঘরে। দেখলেন কিছুই নেই। তার ও তার ভাড়াটিয়ার টিভি, ফ্রিজ সবই পুড়ে ছাই।

আগুনের বিষয়ে বস্তিবাসী জানায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই নুরুল আমিনের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। এরপর পাশে থাকা একটি লেপ-তোষকের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আগুনের তীব্রতা বাড়ে। এতে বস্তির অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫টি দোকান।

আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস জানায়, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে সঠিক কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

korail2

এদিকে প্রতিবারের মতো অগ্নিকাণ্ডের সুযোগে এবারও বস্তির অধিকাংশ দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

বস্তির হোসেন ফার্মেসির মালিক আবুল হোসেন বলেন, ওষুধের পাশাপাশি এই দোকানে বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড করা হত। রাতে আমার দোকান খোলা ছিল, আগুন লাগার সময় সবাই হইহুল্লোর করে দোকানে ঢুকে নগদ টাকা, বিকাশ করার হ্যান্ডসেট, ওষুধপত্রসহ মোট দুই লাখ টাকার মালামাল লুট করে।

এফএম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এটা মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান। দোকানে আমার ৫-৬টা হ্যান্ডসেটসহ কাস্টমারদের সার্ভিসিংয়ের মোট ১০টা হ্যান্ডসেট, কম্পিউটার ও নগদসহ মোট তিন লাখের মালামাল লুট হয়েছে।

বস্তির মায়ের দোয়া সেলুনে গিয়ে দেখা গেল, অগ্নিকাণ্ডের সময় দুষ্কৃতিকারীরা সেলুনের আয়না, চেয়ারসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে।

korail3

কড়াইল বস্তিতে আগুন প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ রাত ৩টায় সর্বশেষ আগুন লাগে এই বস্তিতে। সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট রাতভর চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বরে দুপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় প্রায় পাঁচশ’র বেশি ঘর। গৃহহীন হয় সহস্রাধিক মানুষ। একই বছরের ১৪ মার্চ আগুনে পোড়ে বস্তির অর্ধশত ঘর। আগুনের সময় ছোটাছুটিতে আহত হন দুজন।

কড়াইল বস্তির জমির মূল মালিক বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। তারা আদালতের আদেশ নিয়ে ২০১২ সালে কড়াইলে জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ৪০০টি ঘর উচ্ছেদ করা গেলেও দ্বিতীয় দিন হাজার হাজার বস্তিবাসী গুলশান-মহাখালী এলাকার সড়কে নেমে ওই এলাকা কার্যত অচল করে দেয়। পরে আর তাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। বস্তিবাসীর ধারণা, পরিকল্পিতভাবে বারবার আগুন দেয়া হচ্ছে বস্তিতে।

গুলশান লেকের দুই তীরে দেড়শ একরের বেশি জমির ওপর বিশাল এলাকা নিয়ে এই বস্তিতে কয়েক লাখ লোকের বসবাস। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীর বুকের মধ্যে গড়ে ওঠা এই বস্তি পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালকসহ ঢাকার নিম্ন আয়ের বহু মানুষের ঠিকানা।

এআর/বিএ/পিআর

আরও পড়ুন