ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বাকস্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না : শাহদীন মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ : আশঙ্কায় মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

শাহদীন মালিক বলেন, আমার কাছে সব থেকে কষ্ট লেগেছে, মিডিয়া শুধু ৩২ ধারায় সাংবাদিকতায় গুপ্তচর বৃত্তির বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে গিয়ে আইনের ভয়াবহ দিকগুলো থেকে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে দিয়েছে। এই আইনের পরে হয়ত বাকস্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকবে না।

তিনি বলেন, মাইকের সামনে কথা বললে হয়ত বাকস্বাধীনতা থাকবে। তবে সমস্যা হবে মিডিয়া যদি কম্পিউটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা প্রকাশ করে তখন আবার কী কনসিকুয়েন্স হবে? হয়তো মাইকে বললে আইনি কিছুটা তর্ক করতে পারবো যে কম্পিউটারে আমি কিছু প্রকাশ করি নাই, অতদূর বোধহয় থাকবে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকার ১৭৯১ সালে অর্থাৎ সোয়া দু’শ বছর আগে আমেরিকার গণতন্ত্রে যেতে আমাদের আরও কয়শ’ বছর লাগবে সেটা আমি চিন্তা করছি। কারণ ১৭৯১ সালে আমেরিকার সংবিধানে বলা হলো- বাকস্বাধীনতা খর্ব হতে পারে এমন কোনো আইন কংগ্রেস করতে পারবে না।

‘এখন আমরা চিন্তা করি আমেরিকার ১৭৯১ সাল থেকে আমরা কত পিছিয়ে আছি। আমেরিকার সোয়া দুইশ’ বছর আগের গণতন্ত্রে হয়ত আমি যেতে পারব না। কিন্তু দুই-একটা বিষয়ে কথা বলতে পারব, সে অধিকারটাও আমার থাকবে না’ – যোগ করেন শাহদীন মালিক।

হ্যাকিংয়ের বিষয়ে একটা আইন করার দরকার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কম্পিউটার হ্যাকিং-সংক্রান্ত একটা আইনের দরকার ছিল এবং এ আইনে ওই সংক্রান্ত কিছু ধারা আছে, যেটার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এর সঙ্গে সব ধরনের কথা বলাটা কেমন করে চলে আসল? কম্পিউটারের বিষয়ে শাস্তির পাশাপাশি আমার মনে হয় এর পিছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল কথা বলা বন্ধ করা।

শাহদীন মালিক বলেন, অনেক কিছু আইনে হয়ে যায়, আমরা খেয়াল করি না। বিশাল ভূমিকম্প হয়ে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও কিন্তু ভূমিকম্প হয়ে গেছে। বাক স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে। আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার অধিকাংশ পাইরেটেড কপি। আপনি যাই লিখেন, চাইলে পাইরেটেড সফটওয়্যার দিয়ে আপনি লিখেছেন বলে এই আইনে একটি অপরাধ করে দিতে পারে। সুতরাং এটা সাংঘাতিক ভয়াবহ অবস্থা হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে দেখলাম রাষ্ট্রপতির কাছে সই না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি যতদূর জানি আবদুর রহমান থেকে আবদুল হামিদ পর্যন্ত ৩০ বছরে শুধু একজন রাষ্ট্রপতি একটা বা দুইটা আইনের ধারাতে আপত্তি দিয়েছিলেন। এখন আমরা এই রাষ্ট্রপতির কাছে অনুনয় বিনয় করছি। সম্পাদক পরিষদের এই ছেলে মানুষী দেখে আমি অবাক হচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার’র সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জোর্তিময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান প্রমুখ।

পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করার বিষয়টি উল্লেখ করে জোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, একজন ভিডিও লাইভে কী বললো সে কারণে ৬০ দিন ধরে জেলে আটকে থাকবে। তাহলে তো যারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে, পাচার করে দিচ্ছে তাদের চৌদ্দগোষ্ঠীকে পুরোটা সময় জেলে কাটানো উচিত। শাস্তি আসলে নির্ধারণ করছে কে?

‘আমরা বার বার যে বিষয়টি গুলিয়ে ফেলছি বা সরকার আমাদের গুলিয়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন রকমের ডোজ দিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করছে, সেটা হলো- রাষ্ট্র ধারণাটা সরকার-রাষ্ট্রের মধ্যে একাকার করে দেয়া এবং এর মধ্যে নাগরিকদের উপেক্ষা করা। আমি জানি না নাগরিকদের উপেক্ষা করে রাষ্ট্র কী করে? বলেন শহিদুল আলমের আইনজীবী জোর্তিময় বড়ুয়া।

যে আইন করা হচ্ছে তার চরিত্র রাষ্ট্রের থেকে বড় এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়টি এখনো পর্যন্ত যতটুকু আছে আমাদের মুখের মধ্যে। গণতন্ত্রের ছিটেফুটাও এ দেশে আর নেই। কিন্তু যে স্টাকচারটা বলবৎ করতে চাই, যেটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বলি সেই জিনিসগুলো এই আইনি কাঠামোর কারণে আর কোনোভাবেই থাকছে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন নেতিবাচক দিক তুলে ধরে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলন, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানের আইন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম সব থেকে বেশি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে শাস্তি অন্যদের তুলনায় ভয়াবহ। যেখানে ভারত বা পাকিস্তানে শাস্তি দুই বছর, একই অপরাধে বাংলাদেশ শাস্তি যাবজ্জীবন।

এমএএস/জেএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন