মাথায় চলছিল কীভাবে যাত্রীদের নিরাপদে নামানো যায়
কক্সবাজার বিমানবন্দরের চারপাশে ঘুরেছেন আটবার। অবতরণ করতে না পেরে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর প্রদক্ষিণ করেছেন আরও দুবার। ফ্লাইটে থাকা ১৬৪ যাত্রী ও সাত ক্রু’র জীবন ছিল তার হাতে। ঠান্ডা মাথায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও কৌশল কাজে লাগিয়ে নিরাপদে কক্সবাজারের ফ্লাইট নামিয়েছেন চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে।
১৭১ আরোহীর প্রাণ বাঁচানো এই মহানায়কের নাম এখন সবার মুখে মুখে। তিনি ইউএস-বাংলার বিএস-১৪১ ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখে নিজেকে সংযত রেখে কীভাবে ৭৩৭ মডেলের বোয়িং বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করালেন, সে বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় ইতোমধ্যে বীর হিসেবে আখ্যা পাওয়া পাইলট জাকারিয়ার।
ল্যান্ডিং করতে ব্যর্থ হলেন? বার বার চেষ্টা করলেন। সে সময়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জাকারিয়া বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বলতে, এটা একটা ইমার্জেন্সি সময় ছিল। ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সবচেয়ে বেশি ট্রেইনড করানো হয়। যেভাবে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই অ্যাকশনটা নিয়েছি।’
আরও পড়ুন >>পাইলটের সাহসী ভূমিকায় রক্ষা পেল ১৭১ আরোহী
তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ থাকলেও জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় অবশ্যই পাইলটের কিছু কৌশল থাকে। আমি চেষ্টা করেছি, যতখানি নিরাপদ থাকা সম্ভব এবং কোনো ধরনের ক্ষতি যাতে না হয়। সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছি।’
বাড়তি কোনো কৌশল অবলম্বন করেছিলেন?
জাকারিয়া বলেন, ‘ল্যান্ডিং করতে না পারলে কৌশল হচ্ছে ফুয়েল (তেল) কমাতে হবে। এ সময় ফুয়েল যত কমানো যায় ততই সেফ। ল্যান্ডিংয়ের সময় যদি আগুন লাগে, ফুয়েল না পেলে আগুনের তীব্রতা থাকবে না। এছাড়া এয়ারক্রাফট যতো হালকা থাকবে ঘর্ষণও কম হবে। তাই তেল কমানোর চেষ্টা করেছিলাম।’
বার বার ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রামে যখন সর্বশেষ ল্যান্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন মাথায় কী চিন্তা ছিল?
বলেন, ‘আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল, যাত্রীদের কীভাবে সুস্থ ও নিরাপদে নিচে নামানো যায়। সেটাই করেছি। মাথায় যদি অন্য কিছু আনি তাহলে এদিকে মনোযোগ দিতে পারতাম না।’
ল্যান্ডিংয়ের আগে কেবিনের অবস্থা কী ছিল? কিছু জানতেন?
ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমি সবসময়ই কেবিনের ভেতরের সঙ্গে ইন্টারকানেক্টেড থাকি। ভেতরের অবস্থা জেনেছি। তবে নিরাপদে ল্যান্ড করার পর যাত্রীরা যাওয়ার সময় আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তারা অনেক খুশি।’
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে কক্সবাজারে অবতরণ করতে না পেরে চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি। এতে ১১ শিশুসহ (ইনফ্যান্ট) ১৬৪ যাত্রী ও সাত ক্রু ছিলেন। ইউএস-বাংলার জরুরি অবতরণের পর চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠানামা বন্ধ রাখা হয়।
এআর/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি