এমপি রনজিত রায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাদের যত অভিযোগ
>> টাকার বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ
>> ২০০৮ সালে ছিল চার বিঘা কৃষিজমি, চার শতক জমির ওপর টিনের ঘর
>> ১০ বছরের মাথায় এসে স্ত্রী-সন্তানসহ তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি
যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রনজিত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন যশোর বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দহাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব তরফদার। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে তিনি টাকার নেশায় মগ্ন। এ কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া নেতা ও মুরুব্বিরা তার কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন।’
‘দলীয় কমিটি এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে অন্তত দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ও অদক্ষ লোক বসিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘২০০৪ সালে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকে নিজস্ব লোক দিয়ে পকেট কমিটি বানিয়ে রেখে আজ পর্যন্ত কোনো বর্ধিত সভার আয়োজনের প্রয়োজন মনে করেননি। কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে দলের কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন না করার জন্য যা করা প্রয়োজন তা-ই করেছেন তিনি।’
‘তার মতের বিরুদ্ধে গেলে হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতিত করা হয়। এমন অনেক প্রমাণ মিলবে আমাদের নির্বাচনী এলাকায়। অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোল্যা ওলিয়ারের হত্যার পেছনেও তার মদদ আছে মর্মে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান মোতালেব তরফদার বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে জায়ামাত-বিএনপির সমর্থকদের দলীয় লোক হিসেবে নিয়োগ দেয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। উপজেলা সদরের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা জামায়াতের রোকন আব্দুল মতিনকে নিয়োগ দিয়েছেন। হাবুল্ল্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজিজুর রহমানকে। রায়পুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানকে। ধলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানকে। আগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা হুমায়ন কবিরকে। ছাতিয়ানতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুলকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভয়নগর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আ. আজিজের কন্যা মহাছিনা খাতুনকে ২২ লাখ টাকার বিনিময়ে বাঘারপাড়া উপজেলা খাজুরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া আমির সাহেবের আপন ভাই আ. হকের কন্যা নাঈমা আক্তারকে চেঙ্গুটিয়া বি সি সি মুজাদিয়া মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে ১৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নিয়োগে দুই উপজেলা থেকে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। আওয়ামী লীগের কর্মী হয়েও সাত-আট লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিতে হয়েছে অনেককে। এমন শত শত নাম আপনাদের বলতে পারবো। এসব নিয়োগের পেছনে আছে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘রনজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। তখন নির্বাচনী হলফনামায় স্থাবর ও আস্থাবর সম্পদের বিবরণ দেন। সেখানে পৈত্রিক চার বিঘা কৃষিজমি, চার শতক জমির ওপর তেলিধান পূজা মৌজায় একটি টিনের ঘর আছে বলে উল্লেখ করেন। ছেলে কিংবা স্ত্রীর নামে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স বা জমি নেই। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ১০ বছরে কীভাবে তিনি আকাশছোঁয়া সম্পদের মালিক হলেন?’
‘বর্তমানে তার নামে যশোর রেল রোডে পঞ্চম ও তিনতলা দুটি, যশোর লোহাপট্টিতে একটি, যশোর নিউ মার্কেটে দুটি, বাঘারপাড়া উপজেলায় দোতলা একটি, খাজুরা বাজারে চারতলা একটি, ঢাকার মিরপুর দারুস সালাম রোডে দুটি বাড়ি, ছেলেদের নামে ভারতে সল্ট লেক ও বারাসাতে দুটি বাড়ি, বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলায় ২২৫ একর জমি এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় ৫০ একর জমিসহ মৎস্য ঘের ক্রয় করেন। নিজে পাজেরো গাড়িতে চড়েন, যার মূল্য এক কোটি টাকা। দুই ছেলে ও স্ত্রীর ব্যবহৃত তিনটি গাড়ির মূল্য ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে ১০টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান আছে, যার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আতিয়ার রহমান সরদার, সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আজগর আলী, ১নং ইউনিয়নের চেয়রম্যান দিল পাটুয়ারী, বাসুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরদার, জামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম টুটুল, বন্দোবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান, বাঘার পাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ. রউফ মোল্যা, বাঘারপাড়া যুবলীগের সাবেক নেতা মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান ভোলা, মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল আজিজ, বাবলু কুমার সাহা, ইমদাদ হোসেন, বাঘারপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বায়োজিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বি এম শাহাজালালা, দরাজ হাটের জালালা উদ্দীন প্রমুখ।
এইউএ/এমএআর/আরআইপি