মেট্রোরেল : খানাখন্দ-ধুলাবালিতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
## ধুলাবালির কারণে বাড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি
## কাজ চলছে পুরোদমে, ভোগান্তিও চরমে
## রাতের বেলায় কাজ করার পরামর্শ
## জনবহুল সড়কে এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না
মেট্রোরেল স্বপ্নের ডালপালা মেলতে শুরু করেছে অনেক আগেই। কাজ দ্রুত শেষ করতে চলছে তোড়জোড়। দিনরাতে এককরে এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম উড়াল রেলের কাজ। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। খানাখন্দে ভরা রাস্তা, প্রচুর ধুলাবালির কারণে পথচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এই পথে অফিসগামী যাত্রীদের সময়ও লাগছে প্রায় দ্বিগুণ।
এই অবস্থা চলতে থাকলে জন অসন্তুষ্টি চরমে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে খোদ প্রকল্প তদারককারী সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংস্থার এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
আইএমইডির একটি প্রতিনিধিদল প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কাছে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে এখন চলছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকার কাজ। পুরোটাই একযোগে। ফলে এ এলাকায় তৈরি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে সড়কের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে। তা সংস্কার করা হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার নিয়ম রয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের জন্য রাখা হয়নি একটি টাকাও।
প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আইএমইডি বলেছে, জনবহুল সড়কে এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। এটা শুধু জনমানবহীন এলাকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ মেট্রোরেলের কারণে সড়কে প্রতিদিন অসহনীয় যানজট হচ্ছে। মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে এ পথের যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারছেন না। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় প্রচুর ধুলাবালি। ক্রমেই তার পরিমাণ বাড়ছে। এতে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এই অবস্থায় যানজট কমাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জনসাধারণের জন্য বিকল্প পথ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইএমইডি আরও বলছে, এই সড়কে অ্যালাইনমেন্ট বরাবর মোট সড়কের মাঝে ১১ মিটার প্রশস্ততায় ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। এখানে পাইলিং ও পিয়ারের কাজ করায় মিরপুর সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। তাই অ্যালাইনমেন্ট বরাবর রুট ব্যবহারের যথোপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে জনসচেতনতামূলক সাইন সিগন্যাল ব্যবহার করা উচিত।
প্রকল্পের কাজ নিয়ে আইএমইডি বলছে, মিরপুর-১২ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষ না করে নতুন করে ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব এলাকায় কাজ শুরু করা হয়েছে। যেটা উচিত হচ্ছে না।
আইএমইডি বলছে, ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কটি পুরো ঢাকা শহরের লাইফলাইন। এ অবস্থায় কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ তিন ও চারের আদলে যদি একইভাবে পুরো অ্যালাইনমেন্টে একসঙ্গে কাজ শুরু হয়, তাহলে ঢাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করবে।
এ অবস্থায় কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ পাঁচ ও ছয়ের কাজ এক কিলোমিটার করে শেষ করে সামনে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমইডি। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে প্রয়োজনে রাতের বেলায় কাজ করার পক্ষে মত দেয় সংস্থাটি।
আগামী ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আফতাব উদ্দীন খান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, রাত-দিন কাজ চলছে। নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরেজমিনে সেটা যে কারও চোখে পড়বে।
তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে কিছুটা সমস্যা মেনেই নিতে হবে।
এমএ/বিএ/জেআইএম