ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নয়, প্রত্যাবর্তন উদ্যোগ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৪৭ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এ সমস্যা সমাধানে মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এদের পুনর্বাসন না করে প্রত্যাবর্তনকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী : বিদ্যমান অবস্থা ও পরিকল্পনা ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. হারুন-অর-রশীদ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল মান্নান চৌধুরী, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ, বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক একেএম আবুল কালাম, সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এম আনসার হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাদিক ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

সভায় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও ইস্যুটি আন্তর্জাতিক। তাই বিশ্ব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। তারা যতদিন এদেশে থাকবেন তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নয় প্রত্যাবর্তনের উপর বেশি জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার পাশাপাশি সামগ্রিক বিশ্ব জনগোষ্ঠীকে সোচ্চার ভূমিকা পালনে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতন গণহত্যায় অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর বিচার ও রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে দেশটির উপর চাপ প্রয়োগ করতে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠন করতে হবে।

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য যতবেশি সুযোগ-সুবিধা তৈরি করবো তাদের দেশে যাওয়ার আগ্রহ তত কমে যাবে। তাই যেকোনো উপায়ে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ বাংলাদেশের একার পক্ষে এ বিষটি সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে নিতে হবে যা রোহিঙ্গাদের দেশি ফিরতে সহয়তা করে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে।

অধ্যাপক আরিফ বিল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। তারা বাংলা ভাষায় কথাও বলছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৬শ’ শতাব্দীতে কবি আলাউল রাখাইনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাসকারী আদি গোষ্ঠী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক ডা. মামুন-আল-মাহতাব বলেন, বিশ্বের যেকোনো জাতির চেয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মহার বেশি। চিকিৎসাসেবা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তাদের বেশির ভাগের কোনো সাধারণ জ্ঞান নেই। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। যেকোনো সময় সহিংসতার জড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার এখন বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক জানান, কক্সবাজারের স্থানীয় লোক রয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার। আর সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। এখন তারা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীদের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। ইতোমধ্যে টেকনাফের পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। এখন সেখানে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের এজ হিল ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের শিক্ষক ও পরিকল্পনাবিদ ড. তাসলিম শাকুর এবং দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবু নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী করা হয়।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত বছরের ২৫ অাগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে কয়েক দশক ধরে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

এসআই/এসএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন