নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয় : প্রধানমন্ত্রী
দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। লোকজন লাভবান হয়। আমরা উন্নয়ন করেছি বলেই প্রবৃদ্ধি আজ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪-এ নেমে এসেছে। এ ধরনের একটি সূচক অর্থনীতির জন্য আশির্বাদস্বরূপ।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প ছাড়া বাকি দুটি হলো- ভারতীয় এলওসির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্প উদ্বোধনের সময় ভিডিও কনফারেন্সে দু’দেশের প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিতি ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে একটি দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা চার লেনে উন্নীত করছি। প্রয়োজন হলে এগুলো লেন হবে। ঢাকার সঙ্গে প্রতিটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে। এ ছাড়া আমরা রেল যোগাযোগ গতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ভারত সরকার এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছে। ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগও বৃদ্ধি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখে এই দেশ স্বাধীন করেছেন, আমরা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি। বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। এ দেশের মানুষ যেন খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় ও শিক্ষা পায়, এ দেশের মানুষ যেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারে সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যা যা করণীয় দরকার আমরা সব করে যাব।
তিনি বলেন, দেশের উত্তারাঞ্চল ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ে চা উৎপাদন হচ্ছে। প্রয়োজনে এ অঞ্চলের ব্যাপক এলাকা চা চাষের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে করে এই এলাকার লোকজনের যেমন কর্মসংস্থান হবে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া সুগার বিট দিয়ে চিনি কলগুলো পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করলে দেশের উত্তারাঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নেয়া যৌথ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। উভয় দেশ মিলে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে, তা দুই দেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এবং পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ চালু হয়ে গেলে জ্বালানির দাম অনেক কমে যাবে।
‘ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-জয়দেবপুর তৃতীয়-চতুর্থ এবং পঞ্চম ডুয়েল-গেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে এক দিকে যেমন ঢাকার ওপর চাপ কমবে তেমনি যাতায়াতের গতি বাড়বে। এতে ভারত-বাংলাদেশ উভয়েই উপকৃত হবে,’- বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৯৬ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হলে বাংলাদেশের পণ্য যেমন চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যেতে পারবে তেমনি উত্তরপূর্বে ভারতের রাজ্যগুলোয় সরবরাহ করা যাবে।
কনফারেন্সের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, আপনার জন্মদিনে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। অপরদিকে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিন। এ উপলক্ষে আগাম শুভেচ্ছা জানান নরেন্দ্র মোদি।
ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে সমন্বতি ও গতিময় ট্রেন সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে শহরতলী এবং অন্যান্য জেলাগুলোর যাত্রী সাধারণের রাজধানী ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সময়সাশ্রয়ী যাতায়াত সম্ভব হবে।
প্রকল্পটিতে ভারতীয় এলওসি’র বরাদ্দ ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার খরচ করবে ২০৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
যাত্রী সাধারণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকসংখ্যক ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
এ প্রকল্পে নির্মিতব্য অবকাঠামোগুলো রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, টঙ্গী-জয়দেবপুর হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও গতিময় করার ক্ষেত্রে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর ফিডার সেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকন্স-কল্পতরু যৌথভাবে কাজটি করবে। চুক্তির মেয়াদ কাজ শুরুর তারিখ হতে ৩৬ মাস। এতে এমব্যাংকমেন্টসহ ৯৬ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। এ ছাড়া কালভার্ট ২৫টি, প্লাটফর্ম ৬, প্লাটফর্ম সেড ৬, ফুটওভার ব্রিজ ১২, স্টেশন বিল্ডিং ৪টি এবং অন্যান্য পূর্ত কাজ করা হবে।
বর্তমানে আমদানিকৃত তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হতে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাংকে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বতীপুরে।
এই প্রক্রিয়ায়, পরিবহনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয় হয় উল্লেখ করে তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পাইনলাইনের মাধ্যমে তেল আনলে এ তিনটারই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া, জ্বালানি নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে এ পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে।
পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি গত বছরের ২২ অক্টোবর স্বাক্ষরের পরে চলতি বছরের ৯ এপ্রিলে সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথম তিন বছর ২ দশমিক ৫ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে শেষ পাঁচ বছর ৪ লাখ টনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের আমদানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। নুমালীগড় রিফাইনারি ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য ডিজেল সরবরাহ করবে। উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে এ সময় বর্ধিত করা হবে।
ভারতের শিলিগুড়ি হতে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনে চলতি বছরের আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টন ডিজেল ভারত হতে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে আমদানি করা হবে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণ কাজ, কুলাউড়া-শাহবাজপুর বিভাগের রেলপথের সংস্কার প্রকল্প এবং বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫শ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক কেন্দ্রের দ্বিতীয় বন্টকের উদ্বোধন করেন।
এফএইচএস/জেডএ/এমএস