অবৈধ সম্পদ অর্জন : অব্যাহতি পেলেন রুহুল হক
প্রায় ১০ মাস অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হককে অব্যাহতি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার কমিশনের নিয়মিত সভায় এ অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সাবেক মন্ত্রী রুহুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার অনুসন্ধানটি বুধবার কমিশন সভায় নথিভুক্ত করা (অনুসন্ধান থেকে অব্যাহতি) হয়েছে।
গত ১ জুলাই সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ও তার ছেলে জিয়াউল হককে আড়াই ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল দুদক।
ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ২০১৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় হলফনামা পূরণের ক্ষেত্রে অসাবধানতা বশত ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে আমার স্ত্রীর ব্যাংক স্থিতি ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৯২টাকার স্থলে ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০টাকা উল্লেখ্য করেছি। যা পরবর্তিতে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে ভূল সংশোধনের জন্য জমা দিয়ে ছিলাম। পরে এফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করেছি। তা নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছে। অসাবধানতা ও অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ও চিকিৎসক সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।
এত বড় ভুল কিভাবে হলো সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান। তার সময়ে স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে চলে যান।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুদক কার্যালয় থেকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ২৪ ফেব্রুয়ারি তলব করে নোটিশ পাঠানো হয়। দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম এ নোটিশ পাঠিছিলেন।
প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- গত পাঁচ বছরে তার ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়েছে ১০ গুণ। ব্যাংক ব্যালেন্সের অধিকাংশ তার স্ত্রী ইলা হকের নামে। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা।
২০০৮ সালে স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল মাত্র চার লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন সাত কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৫ গুণ। অন্যদিকে রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে প্রদেয় হলফনামা অনুসারে, সামগ্রিকভাবে ২০০৮ সালের তুলনায় তার অস্থাবর সম্পদ ৪ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে তিনি এবং তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল চার কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০১৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যাংকে ব্যালেন্স হিসাবে রাখা আছে। এককভাবে তার স্ত্রী ইলা হকের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে ৮ গুণ। আগে তার নামে অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মোট ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের। এখন তা আট কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়েছে।