কোটা বাতিলের সুপারিশের পর ঢাবিতে দু’তরফা মিছিল
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল চেয়ে কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনসহ তিন দফা দাবিতে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে ঢাবি ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভটি কার্জন হল, মোকাররম ভবন, টিএসসি হয়ে শাহবাগ অভিমুখে রওনা হয়েছে। শাহবাগ হয়ে ফের ক্যাম্পাসে আসার কথা রয়েছে তাদের। তারা ‘অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে দিয়ে দাও’; ‘মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করো, করতে হবে করে দাও’; ‘হামলাকারীদের বিচার করতে হবে করতে হবে’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নেই’; ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার।
কমিটিকে ১৫ কর্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ৮ জুলাই প্রথম সভা করে কমিটি। পরে কমিটির মেয়াদ আরও ৯০ কার্যদিবস (তিন মাস) বাড়ানো হয়।
কোটা নিয়ে সুপারিশের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইতোমধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমাদের ফাইন্ডিংস হলো- নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ আগে যেটাকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বলা হত, সেগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা থাকবে না। এখন তো আমরা শ্রেণি বলি না, গ্রেড বলি।’
তিনি বলেন, ‘নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ মেধা ভিত্তিতে।’
৪০-তম বিসিএসের তো বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, সেখানে কী হবে- এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘বলা আছে সরকার যদি ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত নেয় সেই অনুযায়ী কোটা নির্ধারিত হবে।’
‘আজকেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট সাবমিট করেছি। রিপোর্ট অনেক বড় তবে ফাইন্ডিংস খুব ছোট।’
কমিটির সুপারিশ কবে থেকে কার্যকর হবে- জনতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন গ্রহণ করা হবে। অনুমোদনের পর এটা ক্যাবিনেটে উপস্থাপিত হবে। ধরেন, নেক্সট ক্যাবিনেট বা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। ক্যাবিনেট পাস করে দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ নিয়ে আদালতের পর্যাবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি, তারা বলেছেন যে, এটা যেহেতু গভর্নমেন্ট পলিসির ডিসিশন, এটা আদালতের রায়কে স্পর্শ করবে না। কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, ‘১৩তম গ্রেডের নিচের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার বিষয়টি আমাদের কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রী তো সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছিলেন- এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা এটা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। বলেছি, এখন কোটা না হলেও চলতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যারা ব্যাকওয়ার্ড, সরকার যদি চায় তাদের কোটা দিতে পারে।’
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ এবং উপজাতী কোটায় পাঁচ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয় আন্দোলনকারীদের। গ্রেফতারও হন আন্দোলনকারী অনেক নেতা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করবো।’
কোটা পর্যালোচনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন- লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান।
এমএইচ/এসআর/জেআইএম