ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ খুলছে বৃহস্পতিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

>> বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাবে নভেম্বরে
>> ৯৯.৬৮ শতাংশের মালিক সরকার
>>দেয়াল-ছাদ ছাড়া সবকিছু নতুন

পাঁচ তারকা হোটেল ‘রূপসী বাংলা’ সংস্কার কাজের জন্য চার বছর বন্ধ থাকার পর ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ নামে তা খুলছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। তবে নভেম্বর নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাবে হোটেলটি।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক এ তথ্য জানান। এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালও উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এটা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের যে, ইন্টারকন্টিনেন্টাল আবার চালু হতে যাচ্ছে।’

হোটেলটি কবে নাগাদ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লেগে যাবে। কারণ এতবড় কর্মযজ্ঞ হয়েছে, এখানে কোথায় বেল দিলে আমাদের ডোরমেট কোথায় যাবে, সব কিছু নতুন করে সাজানো হয়েছে। তাদের চেনাজানার জন্য সময় লাগে। কোনো ফাইভ স্টার হোটেল ওপেন করলেও কমার্শিয়ালি কার্যক্রমে যেতে একটু সময় লাগে। এই সময়টা যৌক্তিকভাবেও প্রয়োজন।’

হোটেলটি লাভজনক হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো হিসাব আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মহিবুল হক বলেন, ‘হিসাব করেই কিন্তু মাঠে নামা হয়েছে, হিসাব করেই কিন্তু রিনোভেশনের কাজ করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে আরও ফাইভ স্টার হোটেল হয়েছে। আমাদের এই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো আপনি খুঁজে পাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র দেয়াল আর ছাদ ছাড়া আর সবকিছু নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। পৃথিবীর ভালো ভালো পণ্যের সন্নিবেশ এখানে ঘটানো হয়েছে।’ সংস্কার কাজের জন্য ৬২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানান বিমান ও পর্যটন সচিব।

‘সত্যিকার অর্থে সেখানে একটা নান্দনিকতার ছাপ রয়ে গেছে। এটা আগে ইন্টারকন্টিনেন্টালই ছিল, এদেশের মানসপটে ইন্টারকন্টিনেন্টালই কিন্তু ভেসে আসছে। হঠাৎ করে শেরাটন আসায় অনেকে কিন্তু বিব্রতও হয়েছেন। আমরা আবার সেই আমেজটা ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা মনে করি, যে টাকাটা ইনভেস্ট করেছি, সেই টাকাটা ফিরে আসবে।’

হোটেল ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এই হোটেলের ৯৯ দশমিক ৬৮ শতাংশের মালিক সরকার, বাকি অংশের মালিক শেয়ারহোল্ডাররা। যে কোন পাঁচতারকা মানের হোটেল ব্যক্তিমালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না। ইন্টারন্যাশনাল যে ব্র্যান্ডগুলো আছে, তাদের দিয়ে পরিচালনা করা হয়। আমরাও চুক্তি করে তাদের দিয়েছি। রুমের ভাড়া কী হবে, সেটা তারা নির্ধারণ করবে।’

intercontinental-

চুক্তি করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের মুনাফা ভাগাভাগি কীভাবে হবে- জানতে চাইলে পর্যটন সচিব বলেন, ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হচ্ছে অপারেটর, মালিক হলো বাংলাদেশ সরকার। গ্রস প্রফিটের ৪০ শতাংশ যদি আয় হয়, তবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল নিয়ে যাবে ৮ শতাংশ। যদি আমরা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আয় করি তবে তারা নেবে ৯ শতাংশ, আর যদি আমরা ৫০ শতাংশের বেশি আয় করি তবে তারা নেবে ১০ শতাংশ। এভাবেই আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল এদেশের প্রথম পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। স্থপতি উইলিয়াম বি ট্যাবলারের নকশায় এ হোটেলটি আজও চমৎকার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে চলে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। এরপর স্টারউড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় ১৯৯৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামের বাণিজ্য কার্যক্রম চলে।

শেরাটনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রূপসী বাংলা হোটেল নামে এটি পরিচালিত হয়। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলটির মালিক কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড কন্টিনেন্টাল এশিয়া প্যাসিফিক প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার শুরু হয়।

রূপসী বাংলা হোটেলের কক্ষ ছিল ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭১ সংখ্যা কমে ২৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার। বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিংপুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলের বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হল রুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে।

হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটি স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাল রাতে জীবনবাজী রেখে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসি প্রখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরো প্রধান আর্নল্ড জেইটলিন, ক্লেয়ার হলিংওর্থ এবং ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ডেভিড গ্রিনওয়ে। এদের প্রতিবেদন ও ছবির মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পেরেছিল বাংলাদেশ কী নৃশংসতার শিকার হয়েছে।

নতুন আনা ড্রিমলাইনার আকাশবীণার দরজা খুলে পড়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান সচিব বলেন, ‘এটা আমরা শুনেছি। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বের হোসেন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংস্কার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র সিং।

আরএমএম/জেএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন