তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের কাজ : প্রধানমন্ত্রী
জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পুঁজিবারের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই হলো আমাদের কাজ। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের পর দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২২ ভাগে নেমে এসেছে। ভবিষতে আমরা আরো কমিয়ে আনতে পারব। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি ) রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখনই উন্নয়নের ধারা এগিয়ে যায় তখনই চরম আঘাত আসে। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরই দেশের উন্নয়ন যাত্রা থেমে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছি। ‘৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন দেশের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং করুন ছিল। প্রথম লক্ষ্যই ছিল খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা। এ সময় আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশকে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে রূপান্তার করি।
তিনি বলেন, ৫ বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটা গতিশীলতা পেয়েছিল। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে জনগণের জন্য যা যা করণীয় তা করছি। জাতির পিতা স্বল্পোন্নত রেখে গিয়েছিলেন, আমরা উন্নয়ন শীল দেশে পরিণত হয়েছি। এ অর্জনটা ধরে রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭৮ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। আপনারা ভালো করে জানেন যে সাধারণত বর্ষাকালে আমাদের দেশে জিনিষপত্রের দাম বাড়ে। এবার কিন্তু দাম বাড়েনি। জিনিষপত্র জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে। প্রবৃদ্ধি যখন উচ্চ থাকে এবং মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয় সে অর্থনীতির সুফলটা বাংলার মানুষ পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঘোষণা ছিল আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। দিন বদল করব। মানুষের দিন বদল শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটালাইটও উৎক্ষেপণ করেছি, যার সুফল মানুষ পাচ্ছে।
অর্থনীতিকে বেগবান, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অবদান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য বিএসইসিসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন; নতুন নতুন প্রোডাক্ট চালুকরণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীর পছন্দের বাসকেট (ঝুলি) সম্প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করা; নতুন প্রোডাক্ট চালু করার আগে তার পরিচিতি, পরিচালন প্রক্রিয়া ও কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের অবহিতকরণ; বিএসইসির প্রশিক্ষণ একাডেমির কার্যক্রম জোরদার করে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তৃতিকরণ; পুঁজিবাজারের ভূমিকা ও গুরুত্ব, অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে পুঁজিবাজারের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত কোম্পনিসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানির শেয়ার লেনদেন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্মল ক্যাপ বোর্ড চালু করাসহ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত, এসব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের অগ্রগতির ধারা আরও বেগবান হবে।
বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের ভূমিকা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অর্থনীতিকে বেগবান, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের অবদান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমি বিএসইসিসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ‘ভবিষ্যতেও’ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাবে, যাতে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে বিএসইসি পেয়েছে ‘এ’ ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মান, বেড়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ। আমাদের বাজারের প্রতি ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের আগ্রহ বেড়েছে।
এফএইচএস/এনডিএস/আরআইপি