সংসদের আবাসনে বহিরাগত, অনৈতিক কাজ করে ধরা!
জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নবনির্মিত সরকারি ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েও অনেকে তা ভাড়া দিয়েছেন। এদের ভাড়া দেয়া এক ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই দেয়া হয়েছে সাবলেট। অন্যদিকে সবুজায়নের জন্য রাখা জায়গা দখল করে নিজেরা থাকা ছাড়াও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা রমরমা ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছেন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পশ্চিম আগারগাঁও সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
এ বিষয়ে সংসদের সহকারী সচিব (এস্টেট) দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্পিকারের অনুমোদনের নিতে ফাইল পাঠানো হয়েছে। স্পিকার নির্দেশ দিলেই ব্যবস্থা শুরু হবে।’
গত বছরের ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানকার ৪৪৮টি ফ্ল্যাটের আবাসিক ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু বরাদ্দপ্রাপ্তদের ১৮ জন ফ্ল্যাটে না থেকে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এদের কেউ কেউ রাজধানীতে নিজের বাড়ি আর অন্যরা তুলনামূলকভাবে কম ভাড়ার বাসায় থেকে বেশি টাকায় সংসদের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছেন।
সেখানকার ফ্ল্যাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, সংসদের নিরাপত্তা সহকারী নাজমা আক্তার বরাদ্দপ্রাপ্ত ফ্ল্যাটে না থেকে ভাড়া দিয়েছেন। গত ২৫ আগস্ট সেই ফ্ল্যাট থেকে আপত্তিকর অবস্থায় নারী-পুরুষ ধরা পড়ে। সেখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বিয়ে না করেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বসবাস করে আসছিলেন তারা। স্বামী হিন্দু হলেও আরেক মুসলমান নারীকে বিয়ে করে রাজধানীর অন্যত্র রেখে সংসদের ওই আবাসিক ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আরেকটি হিন্দু নারীর সঙ্গে বসবাস করেছিলেন তিনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের বের করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমা আক্তার ভাড়া দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই ফ্ল্যাটে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে যাদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছিল তাদেরকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’
এছাড়া সংসদের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাজমুন নাহার, সহকারী সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর মনসুর আহমদ, কামরা পরিচালক নাজির আহমদ, এমএলএস মো. ইসরাফিল, আফরোজা জাহান, সুমন আহমদসহ অনেকে ফ্ল্যাটে না ওঠে ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই সাবলেট দেয়া হয়েছে। এতে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা যায়, ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এসব বাসভবনের ৪০ শতাংশ সবুজায়নের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়াও সার্ভিসের জন্য ২০টি ফ্ল্যাট সংসদের গণপূর্তে কর্মরতদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবুও সবুজায়নের জন্য রাখা জায়াগায় টিনশেড ঘর বানিয়ে গণপূর্তের কর্মচারীরা থাকা ছাড়াও ১০০ পরিবারকে ভাড়া দিয়েছেন। এসব ভাড়াটিয়া সরকারের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করছেন। সেখানে বসবাসরতদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি রুম ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে।
সংসদের প্রথম শ্রেণির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওইসব টিনশেড বাসায় প্রায় ঝগড়া হয়। নারী-পুরুষরা খিস্তিখেউড় করে। আবার সারারাতই নানা ধরনের শব্দ হয়। না জানি কী বানায় তারা।
সবুজায়নের জন্য রাখা সংরক্ষিত জায়গায় নিজেদের কর্মচারী ছাড়াও ভাড়া দেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা বলেন, ‘সংসদের আবাসন শুরুর আগেই সেখানে আমাদের কর্মচারীরা বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ভাড়া দেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি।’
এইচএস/এসআর/আরআইপি