ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সিরাজ ও আকরামের বিরুদ্ধে যে ৬ অভিযোগ প্রমাণিত

প্রকাশিত: ০৯:৩০ এএম, ১১ আগস্ট ২০১৫

বাগেরহাটের রাজাকার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৬টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন প্রসিকিউশন।

রাজাকার সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক।

রায়ে বলা হয়, আসামি সিরাজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর আকরাম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে, অথবা গুলি করে সিরাজ মাস্টারের দণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে।

৭ টি অভিযোগের মধ্যে আসামি সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ১,২,৩,৪ ও ৫ নং অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত ৫টি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আসামি আকরামের বিরুদ্ধে ৭ নং অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে ৬ নং অভিযোগটি প্রমাণ করতে পারেন নি রাষ্ট্রপক্ষ।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সাত অভিযোগ:
অভিযোগ ১ : ১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টার দিকে রাজাকার বাহিনীর বাগেরহাট সাব ডিভিশনের তৎকালীন ডেপুটি কমান্ডার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার ও রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন রাজাকার এবং বেশ কিছু স্বাধীনতাবিরোধী বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ওই সময় সিরাজ এবং তার সহযোগীরা প্রায় ৪০-৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করে। এ ঘটনায় সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

অভিযোগ ২ :  ১৯৭১ সালের ২১ মে ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২/৩ হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাগেরহাটের রামপাল থানার ডাকরার কালীমন্দিরে জড়ো হন। সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ হামলা চালিয়ে সেদিন ৬/৭শ’ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ‘কসাই সিরাজ’ বলে কুখ্যাত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে একা অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অভিযোগ ৩ :  মুক্তিযুদ্ধকালে ১৮ জুন সকাল ১০টার দিকে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য এবং ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র রাজাকার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া গ্রাম এবং কান্দাপাড়া বাজার থেকে ২০ জনকে অপহরণ করে। তাদেরকে কান্দাপাড়া বাজারে আটকে রেখে নির্যাতন করে সিরাজ মাস্টার ও তার সহযোগীরা। তাদের নির্যাতনে ১৯ জন নিহত হন। অপহৃত শেখ সুলতান আলী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, যিনি পরে ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অভিযোগ ৪ :  মুক্তিযুদ্ধকালে ১৪ অক্টোবর বেলা ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বাগেরহাটের সদর থানার চুলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়ি লুটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই দিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ৭ জন নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে সিরাজ মাস্টারের নেতৃত্বে রাজাকাররা। এ অভিযোগেও সিরাজ মাস্টারকে একা অভিযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অভিযোগ ৫ : মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ নভেম্বর দুপুর ৩টার দিকে সিরাজ মাস্টার, স্থানীয় রাজাকার নেতা খান আকরাম হোসেনসহ ৫০-৬০ জন রাজাকার সদস্য মিলে কচুয়া থানার শাঁখারিকাঠি হাটে হামলা চালায়। সেখানে তারা ৪০ জন হিন্দু এবং মুক্তিযুদ্ধ সমর্থককে আটক করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগে সিরাজ মাস্টারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অভিযোগ ৬ : ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাগেরহাটের কচুয়া থানার বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরস্ত্র ৫ জনকে অপহরণ ও আটক করে সিরাজ ও আকরামের নেতৃত্বে রাজাকাররা। পরে তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

অভিযোগ ৭ : মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক করার পর আসামি আকরামের নেতৃত্বে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আকরামকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

উল্লেখিত সাতটি অভিযোগের মধ্যে ৬নং অভিযোগটি ছাড়া বাকি ছয়টি অভিযোগ সন্দহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

এফএইচ/এসকেডি/আরআইপি