গার্মেন্ট শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ডিসেম্বরে
গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। মজুরি নির্ধারণে ১৭ অক্টোবর বোর্ড থেকে সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে তা উঠবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে। এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর বোর্ডের পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোডে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চতুর্থ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, নতুন মজুরি কত হচ্ছে এখনও তা নির্ধারণ হয়নি?
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৈঠকে চার সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মালিক পক্ষের প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অস্থায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আলোচনা করে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি বিধায় আবার আরেকটি মিটিং দেয়া হয়েছে। সেই মিটিংয়েই যে হয়ে যাবে সেটাও আমরা বলতে পারছি না। চেষ্টা করছি সবাই মিলে এমন একটা জায়গায় আসা যায় কিনা যাতে শিল্পের সক্ষমতা এবং শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা রক্ষা পায়। সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই ফাইনাল অ্যামাউন্ট (নতুন মজুরি) আপনাদের জানাতে পারব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ীই নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হবে। আর নতুন মজুরি কাঠামো ডিসেম্বরেই বাস্তবায়ন হবে। এটা কনফার্ম।
মজুরি নির্ধারণে বোর্ডের কাছে দেয়া প্রস্তাব থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে ভারসাম্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। এর আগে, ১৬ জুলাই তৃতীয় বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয়। ওই বৈঠকে শ্রমিক পক্ষ সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার দাবি করে। বিদ্যমান মজুরি ১২৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় তারা। তবে, মালিক পক্ষ ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব দেয়।
মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বিভিন্ন গ্রেডে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর কথা জানান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তা নাকচ করে দেয় গার্মেন্ট শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন। সেই সংগঠনগুলো ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে অটল।
পঞ্চম বৈঠকের দিন সোমবারও ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের বৈঠক চলার সময়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কার্যালয়ের নিচে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ বিক্ষোভ করেছে, যেখানে পূর্ববতী বৈঠকের দিনগুলোর চেয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশি।
মজুরি বোর্ডের বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি একটু বিবেচনা করে দেখার জন্য, তাদের প্রস্তাব থেকে কিছুটা ছাড় দেয়া যায় কিনা কিংবা একটু কাছাকাছি আসা যায় কিনা। এই বিষয়ে আমরা উভয়পক্ষের কাছে প্রস্তাব রেখেছি। উভয়পক্ষই এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। মালিক ও শ্রমিক পক্ষ উভয়ই তাদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
এ সময় বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, ১২ সেপ্টেম্বর বোর্ডের পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হবে। সে সময়ের মধ্যে উভয়পক্ষ একটি কাছাকাছি অবস্থানে আসতে পারবেন বলে তার প্রত্যাশা। আর মজুরি নির্ধারণে ১৭ অক্টোবর বোর্ড থেকে সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে তা দেখবে শ্রম মন্ত্রণালয়।
এমএ/জেএইচ/এমএস