কারে বসাবো, বসলে তো চেয়ার ছাড়ে না
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারে বসাবো, বসলে তো চেয়ার ছাড়ে না। সদ্য সমাপ্ত তার নেপাল সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। রোববার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানে বিধান সংরক্ষিত আছে। আমরা বহু অভিজ্ঞতা নিয়েছি। মার্শাল ল’ দেখলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখলাম। কারে বসাবো, বসলে তো চেয়ার ছাড়ে না। আমরা আর অনির্বাচিত সরকারের হস্তেক্ষেপ দেখতে চাই না।
‘বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না। বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর আমি তার বাসায় গেলাম। আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। ওইদিন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হতে পারে না,’- বলেন তিনি
খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে বিএনপির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এতিমদের টাকা চুরির দায়ে। দুর্নীতির মামলায় তিনি কারাগারে। ওনারই পছন্দের ফখরুদ্দিন, মইনউদ্দিনের সময় মামলা দেয়া হয়েছে। দশ বছর ধরে এই মামলা চলেছে। ১৫৪ দিন ধার্য করা হয়েছে। তারা চুরি করলে অনেকেই তাদের পক্ষে। আর আমাদের বেলায় পান থেকে চুন খসলে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্টের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আর দ্রুত মুক্তি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের ব্যাপার। এটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। আমরা জোর করে কাউকে নির্বাচনে আনতে চাই না।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা নিয়ে বলতে চাই, আমাদের দেশেও এই ধরনের ছবি নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। এখন কথাটা হচ্ছে, শিখলো কার কাছ থেকে এরা? আমাদের বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে এগুলো শিখলো কি-না তারা? বিভিন্নভাবে জামায়াত-বিএনপিও কিন্তু এ ধরনের প্রচার চালিয়েছিল। মিয়ানমার যেটা করেছে এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করেছে।
গত ৩১ আগস্ট গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার ছবিকেই মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দ্বারা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী নিধনের ছবি হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইটি জুলাই মাসে প্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটিকে দেয়া বাংলাদেশের তালিকা অনুযায়ী ৩ হাজার লোককে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের যিনি প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তাদের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী তাদের ৩ হাজার লোকের একটা তালিকা দেয়া হয়েছে, যারা ফিরে যেতে চান। তিনি (মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট) তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে আমাকে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণত যখন এই ধরনের (বিমসটেক) একটা আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরি হয়, তখন সেখানে এ ধরনের দ্বি-পাক্ষিক বিষয়গুলো সেখানে তুলে ধরা যায় না। এতে পরিবেশটা ভালো থাকে। আমরা বঙ্গপোসগারকে ঘিরে যে দেশগুলো সে দেশগুলোর সঙ্গে একটা সমঝোতা ও দেশগুলোর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। সার্বিক বিবেচনায় বিমসটেকের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। তারা বলে, কিন্তু করতে পারে না। কারণ, করতে গেলে অনেক বাধা আসে।
এএসএস/জেডএ/আরআইপি