দুর্নীতি রুখতে টিআইবির ১২ সুপারিশ
* ১৬টি সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার ৬৬.৫ শতাংশ মানুষ
* সর্বোচ্চ দুর্নীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়
* বিচারিক সেবায় দুর্নীতির শিকার ৬০.৫ শতাংশ মানুষ
দেশে বিদ্যমান ১৬টি সেবাখাতের ওপর জরিপ চালিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, ২০১৭ সালে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। আর সবগুলো সেবাখাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়। দুর্নীতিতে দ্বিতীয় স্থানে পাসপোর্ট অফিস, তৃতীয় বিআরটিএ এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে বিচারিক সেবাখাত। সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার হওয়া সেবাগ্রহীতাদের মতামতের ভিত্তিতে দুর্নীতি কমাতে ১২ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
টিআইবি বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতি কিংবা মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারিক সেবার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বিচারিক সেবা নেয়ার সময় দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এমন অবস্থায় দুর্নীতি কমাতে গেলে সবপর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা, জবাবদিহিতা কার্যকর করা, সেবাগ্রহীতাদেরও দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডিতে মাইডাস ভবনে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি।
‘সেবাখাতে দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও গবেষণা উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদ ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
সেবাখাতে ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারকে দুর্নীতির সংজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছে টিআইবি। সেই সংজ্ঞায় দুর্নীতির আওতায় সেবাখাতে সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেসব দুর্নীতির শিকার হয়েছেন তা হলো- ঘুষ, সম্পদ আত্মসাৎ, প্রতারণা, দায়িত্বে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি ও প্রভাব বিস্তার ও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি।
জরিপে উঠে আসে, ১৬ সেবাখাতের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়, পাসপোর্ট ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বিআরটিএ-তে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বিচারিক সেবায় ৬০.৫ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।
২০১৭ সালে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক সেবা, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, বিআটিএ, কর ও শুল্ক, এনজিও, পাসপোর্ট, বীমা, গ্যাস সেবাখাতে এই জরিপ করে টিআইবি।
দুর্নীতি রুখতে টিআইবির ১২ সুপারিশ
১. বিভিন্ন সেবাখাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্যমান আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২. সেবাখাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভাগীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যকর করতে হবে।
৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুদৃঢ় নৈতিক আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। এর ভিত্তিতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার, তিরস্কার কিংবা শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানির মতো জণগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন জোরদার ও গণমাধ্যমের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ ও ‘তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন ২০১১’ এর কার্যকর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সকল অংশীজনের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৮. সেবাগ্রহীতার সঙ্গে সেবাদাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হ্রাসে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। জনগণের সেবা সম্পর্কিত তথ্যে অভিগম্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেবাখাতে অনলাইনে স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ বৃদ্ধি করতে হবে।
৯. সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া প্রচলন ও কার্যকর করতে হবে এবং নাগরিক সনদের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০. সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় ধাপ ও অন্যান্য বাধা দূর করতে পদ্ধতিগত সংস্কার করতে হবে।
১১ জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিক্স’র ঘাটতি দূরীকরণে সেবাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
১২ দুর্নীতি প্রতিরোধে সব পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
জেইউ/জেডএ/পিআর