ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

কলেজের প্রভাষক থেকে মানব পাচার চক্রের হোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:০৪ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৮

পাঁচদিন আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তিনদিনের রিমান্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। একদিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে পরের দিন রোববার (১৯ আগস্ট) আবারও গ্রেফতার হন। তিনি মানব পাচার চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ আছেম। মানব পাচারের পাশাপাশি তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের বিবিএর প্রভাষক হিসেবে রয়েছেন।

সোমবার (২০ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আছেম শিক্ষকতার আড়ালে প্রায় এক দশক ধরে গড়ে তোলে মানব পাচার চক্র। ২০০৯ সাল থেকে সাগর পথে হাজার হাজার মানুষকে পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছে শত কোটি টাকা।

তিনি বলেন, গত পাঁচদিন আগে আছেমকে একবার গ্রেফতার করা হয়। তিন দিনের রিমান্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। রোববার জামিনে বের হলে অন্য মামলায় তাকে আবারও গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় আছেমের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল, তার প্রতিষ্ঠানের তিনটি রেজিস্টার, বিকাশের হিসাব রেজিস্টারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও অবৈধ সম্পত্তির কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

মোল্যা নজরুল বলেন, আছেম নিজের নামে ছাড়াও ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা, মা খদিজা এবং সহযোগী আরিফ, একরাম, ওসমান সারোয়ারের নামে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফে ব্যাংক হিসাব খুলে মানব পাচারের ২০-২৫ কোটি টাকা গ্রহণের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে বিভিন্ন মাধ্যমসহ প্রায় শতকোটি টাকা অবৈধভাবে নিয়েছেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আছেম মানব পাচারের টাকায় টেকনাফে বাড়ি ও জমি এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইগড়ে একটি ছয় তলা বাড়ি তৈরি করেছে।

আছেমের কুকর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বাবা আনোয়ার হোসেন ও বড়ভাই মোহাম্মদ খোবায়েদ দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া রয়েছেন। সেই সুবাদে আছেম ও তার ছোট ভাই জাভেদ মোস্তফা মানব পাচারে প্রথমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দালাল নিয়োগ করে। মালয়েশিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজন সংগ্রহ করে টেকনাফ থেকে ট্রলার যোগে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আটকে রাখে।

তাদেরকে আটক রেখে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে স্বজনদের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর পাচারকৃত লোকজনের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণের টাকা আছেম ও তার সহযোগিদের কাছে নগদ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা মোবাইলের মাধ্যমে প্রদান করে। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মেরে ফেলা হয়। মুক্তিপণের টাকা প্রদানকারীদের পরে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে আবার টাকা দাবি করতো চক্রের সদস্যরা।

ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে এ চক্রটি সাগর পথে সিরাজগঞ্জের মাসুদকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে। এরপর পাচারকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা দাবি করে। মাসুদের বাবা আ. ছালাম ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে মুক্তিপণের টাকা পাঠান। কিন্তু এরপরও তার ছেলে মুক্তি না পেলে ২০১৬ সালের ১১ মার্চ উল্লাপাড়া থানায় একটি মামলা (মামলা নং-১১) করেন।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম মুক্তিপণের টাকা পাঠানো ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে চক্রটি চিহ্নিত করে। মুক্তিপণের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত বছরের মে মাসে সিআইডি বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং আইনে বনানী থানায় আরেকটি মামলা করে।

এ পর্যন্ত কতজন লোককে সাগর পথে পাচার করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির ঊধ্র্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, তাদের যে পরিমাণ টাকার লেনদেন, তাতে হাজারের উপরে মানুষ পাচার হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।

এআর/এএইচ/এমএস

আরও পড়ুন