আসছে দেরিতে, ছাড়ছেও দেরিতে
কমলাপুর স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখনও দাঁড়ানো উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সকাল ৮টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ১০টা ৪৫ মিনিটেও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ছিল।
পুরো ট্রেন জুড়েই যাত্রীতে ঠাসা, যেন পা ফেলার জায়গাটুকুও নেই। ট্রেনটি বিলম্বে আসার কারণে আগে থেকেই প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে বিলম্বে পৌঁছানোর পরই যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। মানুষের ভিড় ঠেলে তখন সবার ট্রেনে ওঠার চেষ্টা। নিমিষেই ট্রেনের কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল। কেউবা ভিড় ঠেলে গেট দিয়ে ভেতরে উঠছেন, যারা পারেননি তাদের কেউবা জানালা দিয়ে প্রথমে ব্যাগ, পরে পরিবারের সদস্যদের ট্রেনের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, এরপর নিজেও উঠছেন ওই জানালা দিয়েই। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রেনে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এ তো গেল ট্রেনের ভেতরের দৃশ্য। ট্রেনের ছাদে কোথাও ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেনের ছাদ জুড়ে মানুষ আর মানুষ।
ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন রোববার (১৯ আগস্ট) কমলাপুর স্টেশনের চিত্র এটি। গত ১০ আগস্ট যারা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অগ্রিম টিকিট পেয়েছিলেন ,তারাই আজ ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়ছেন। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন তারা। ঈদ আসলেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখী মানুষদের। তবুও ঘরে ফেরাতেই যেন সব আনন্দ। রাজধানীর একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মুহূর্ত। সে কারণেই শত ভোগান্তির মাঝে ট্রেনের বিলম্বকে সঙ্গী করে ঘরে ফিরছিন তারা।
নীলসাগর ট্রেনের যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৮টার ট্রেন এটি, তবুও ১০টা ৪০ মিনিটেও ট্রেনটি স্টেশনই আছে। ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বিলম্বতেও ট্রেনটি ছাড়তে পারেনি। হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে বিরক্তি-ভোগান্তি-বিড়ম্বনার মধ্যে আছেন। এই ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য ১২-১৪ ঘণ্টা সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছে। অথচ আজ আবার যাত্রার দিন ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেটেও ট্রেন ছাড়েনি। মানুষের তো ভোগান্তির একটা সীমা আছে!’
শুধু নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনই নয়; রোববার ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনেও সকাল থেকেই বেশ কয়টি ট্রেন দেরিতে এসে দেরিতে ছেড়ে গেছে। এছাড়া সকাল ৯টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টাতেও স্টেশনেই পৌঁছায়নি ট্রেনটি। এদিকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকলেও বেলা ১১টাতে ছেড়ে যায়নি ট্রেনটি, অথচ সিডিউল অনুযায়ী ট্রেনটি সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী শিহাবুল ইসলাম বলেন, ‘এই ক্ষোভ কাকে কাকে জানাব, এই ভোগান্তির কথা কাকে বলব? রংপুর এক্সপ্রেস টেনটি সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা অথচ ১১টা ১৫ মিনিটেও স্টেশনে আসেনি। স্ত্রী-ছোট সন্তানসহ আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? গত ১০ আগস্ট ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে আজকের টিকিট পেয়েছিলাম কিন্তু আজকের ভোগান্তিটা আরও বেশি, কারণ সঙ্গে আছে স্ত্রী, ছোট সন্তান।’
এছাড়া রোববার দিনের শুরুতে প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ৭টার পর। খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। ঈদ স্পেশাল ট্রেন ৯টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টা ২০ মিনিটেও ছেড়ে যায়নি।
ট্রেনের এমন বিলম্ব বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘ট্রেনগুলো দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে আসার কারণে ছেড়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ঈদের সময় যাত্রীর চাপ থাকায় ট্রেনে ধীরগতি থাকে, আবার সব স্টেশনে দুই/এক মিনিট বেশি সময় প্রয়োজন হয় যাত্রী ওঠানামার জন্য। তবুও আমরা সবসময় চেষ্টা করছি যাতে কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়।’
কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রোববার মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, ৪টি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস।
এএস/এসআর/এমএস