উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হইচই কেন?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন আমি বড় সাংবাদিক, লেখক, কবি, তাদের অপরাধ কোনো অপরাধ নয়। সেটা ভাবা ঠিক হবে না। আপনি অনেক জ্ঞানী হতে পারেন, কিন্তু সমাজের প্রতি আপনার কি কোন দায়িত্ব থাকবে না? আর দায়িত্ব বোধের পরিচয় যদি না দেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কি অন্যায় হয়ে যাবে? উসকানি দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কেন হইচই শুরু হয়ে যাবে?’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাম্যবাদী দলের প্রধান দিলীপ বড়ুয়া ও যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোরদেও আন্দোলন শুরু হলো। দু’দিন দেখলাম। তারপর তৃতীয় শক্তি ঢুকে গেল। স্কুলের ব্যাগে, দা, চাইনিজ কুড়াল, পাথর। তাদের ব্যাগে তো বই থাকার কথা। যারা অন্যায় করেছে তাদের নিয়ে তো কেউ লিখলেন না। তাদের বিরুদ্ধে তো আপনাদের কালি ফুরিয়ে গেল?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি এবং জিয়াউর রহমান তাদের দূতাবাসে চাকরিসহ বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিলো জিয়ার স্ত্রী (খালেদা জিয়া)। তার অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে জিয়াউর রহমান একাই নয়, তার স্ত্রীও ১৫ আগস্টের হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিরা খুনিই হয়। এই খুনিরা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। কাজেই এদের হাতে দেশের ক্ষমতা গেলে দেশের কি উন্নতি হবে, দেশের মানুষ কি ন্যায় বিচার পাবে?
শেখ হাসিনা বলেন, অন্যায়ের মধ্য দিয়ে যাদের ক্ষমতা দখল তারা কখনও ন্যায় বিচার করতে পারে না। ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কজনক দিন। মাত্র সাড়ে তিনবছর ক্ষমতা পেয়েছিলেন। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে, তার হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা যদি থাকতো তবে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাঙালি জাতি ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতো।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পেছনে স্বাধীনতা বিরোধী সবুর খানের বংশধরেরা জড়িত বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তারা তো এদেশের উন্নয়ন চায় না। কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে, আমরা তাদের দাবি বাস্তবায়ন করেছি। কিন্তু, কিছু লোক এই বিষয়টা সুযোগ হিসেবে নিয়ে ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং এখনো চক্রান্ত করে যাচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, তারা নিজেরা ভালো থাকতে চায়, বাংলাদেশের কল্যাণ দেখতে চায় না। তাদের অর্থের উৎস কোথায়? তারা কিছু হলেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। স্বাধীনতার পর থেকে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু হয়েছিল। জনগণকে বিভ্রান্তে অপচেষ্টা হয়েছে। কর্নেল রশিদ-ফারুকরা বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারেও বলেছিল শেখ মুজিব এত বেশি জনপ্রিয়, শত চেষ্টা করেও তার জনপ্রিয়তা কমানো যায়নি। যার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র দিয়েছে বলে অনেকে জিয়াউর রহমানকে বাহবা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমার প্রশ্ন, জিয়াউর রহমান কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন? অস্ত্রের মুখে বিচারপতি সায়েমকে হটিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গুম আর হত্যা করাই তো ছিল জিয়ার কাজ। হাজার হাজার সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন তিনি। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কি করে গণতন্ত্র দিতে পারে? সংবিধান লংঘন করে যে ক্ষমতায় আসে সে শাসক কিভাবে গণতন্ত্র দেয়?
এফএইচএস/এমআরএম/পিআর