ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দেখে কী ২১ মনে হয়, এরা লাইসেন্স পায় কেমনে?

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৪০ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮

আজ ট্রাফিক সপ্তাহের শেষ দিন। প্রথমে ট্রাফিক সপ্তাহ সাতদিন থাকলেও পরে তা দশ দিন করা হয়। এদিনেও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ভিআইপি পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে চালকের লাইসেন্স চেক করেন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

গাড়িচালক রবিনকে তৎক্ষণাৎ নিচে নামালেন এনায়েত উল্লাহ। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট ফরহাদ। তাকে লাইসেন্স যাচাই করতে বললেন। সার্জেন্ট লাইসেন্স যাচাই করে দেখলেন এটি অপেশাদার এবং হালকা যান (মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা) চালানোর লাইসেন্স। পরে তাকে মামলা দেন সার্জেন্ট।

এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ওর বয়স ২১ কেমনে হয়? দেখলেই বুঝা যায় ওর ১৫-১৬ বছর। অথচ পেশাদার লাইসেন্স পেতে ২১ বছর হতে হয়। এরা কীভাবে লাইসেন্স পাচ্ছে? কেন ওদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে?’ জবাবে সার্জেন্ট ফরহাদ বলেন, ‘লাইসেন্স তো বিআরটিএ দেয়।’

ঘণ্টাব্যাপী সড়কে দাঁড়িয়ে এই রুটে চলাচলকারী স্বাধীন, লাব্বায়েক, বিকাশ, ওয়েলকাম ও স্বজন পরিবহনের কয়েকটি বাস থামিয়ে সেগুলোর নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করতে থাকেন তারা।

এ সময় ওয়েলকাম পরিবহনের চালক পলকও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে শনাক্ত হয়। তবে তার লাইসেন্স আগেই জব্দ করে মামলা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে সে। সার্জেন্টের কাছে মামলার কাগজ দেখায় পলক।

Lisence

এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় মানিক মিয়া এভিনিউ পশ্চিম বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয় ও অন্যান্য বাস মালিকরা। এছাড়াও রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও মিরপুরে বাস মালিকরা যানবাহন ও লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করেন।

এ বিষয়ে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, দুটা শিশুর মৃত্যুর পর স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেই আন্দোলন করে আমাদের নজর কেড়েছে। আমরা দেখেছি, যে টার্গেট ও চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিযোগিতা ও দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা এসব বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি। সকাল থেকে রাস্তায় নেমে কয়েকটি বাস থামিয়ে এগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছি। আমাদের নজরে এসেছে যে অনেক চালকের ২১ বছর হয়নি, তবুও লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। কেউ কেউ হালকা যানবাহনের লাইসেন্স দিয়ে ভারি যানবাহন চালায়। অনেক চালকের চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝা যায় যে নেশা করে। আমার প্রশ্ন কীভাবে এত অল্প বয়সে তারা লাইসেন্স পাচ্ছে?

এদিকে বাস মালিক ও পুলিশের পাশাপাশি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিআরটিএ’র একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম। দুপুর পর্যন্ত যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে মোট ২০টি মামলা করা হয়।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অধিকাংশ যানবাহনকে রুট পারমিট এবং ফিটনেস ঠিক না থাকায় মামলা দেয়া হয়েছে। আদালতে একজন প্রাইভেট সিএনজিচালককে আটকের নির্দেশ দিয়েছে। ওই চালক প্রাইভেট সিএনজি ভাড়ায় চালনা করেন, তার কাছে লাইসেন্সও নেই।’

অপ্রাপ্ত বয়স্করা কীভাবে বয়স বাড়িয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স দেয় বিআরটিএ। আমি এখানে আদালত পরিচালনা করছি। আমার পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয়।’

Lisence

বাস মালিকদের এমন উদ্যোগকে অনেকেই আইওয়াশ বলছেন। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, এটা আইওয়াশ কি-না ভবিষ্যতে বুঝতে পারবেন। এই সমস্যা রাতারাতি ঠিক না হলেও সড়কে নিরাপদ করেই ঘরে ফিরব।

পয়েন্টে পয়েন্টে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করলে অনেকেই বাস বের করে না। আসন্ন ঈদুল আজহায় পরিবহন সংকট দেখা দেবে কি-না? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ঈদের সময় রাস্তায় গাড়ি আটকে কাগজপত্র ও লাইসেন্স যাচাই করা হবে না। বাস মালিকরা টার্মিনালে নিজ নিজ বাসের বিষয়ে নিজেদের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বাস শ্রমিকদের বেতনভুক্ত ও সব বাসকে একটি কোম্পানির আওতায় নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এটির অবস্থা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস শ্রমিকদের বেতনভুক্ত করার জন্য আমরা সমিতির পক্ষ থেকে তৎকালীন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, বাস মালিক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমাপ্ত পর্যায়ে মেয়রের মৃত্যু হয়। এর দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবারও এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। সব বাসকে এক কোম্পানিতে আনার কাজ অনেকাংশে এগিয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বেশি দিন লাগবে না বলে ধারণা করছি।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। দাবি পূরণের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফেরার পর থেকে সড়কে নৈরাজ্য ঠেকাতে নানা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এআর/জেএইচ/পিআর

আরও পড়ুন