ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

প্যারাসিটামলও যেখানে দুষ্প্রাপ্য

প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৫

পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার, নার্স সবই আছে, শুধু প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা কথায় কথায় তৃণমূল পর্যায়ের কমিনিউনিটি ক্লিনিকেও অ্যান্টিবায়োটিকসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ সরবরাহের দাবি করে থাকেন।

কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো খোদ রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নাকের ডগায় তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীদের কাছে সাধারণ অসুখ-বিসুখের ওষুধও দুষ্প্রাপ্য!

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জ্বর, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, ব্যাথানাশক, ভিটামিনের স্বল্পতা ও চুলকানির চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, এন্টাসিড, ইনফ্লাম, বেবি লোশন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মতো সাধারণ ওষুধও তাদের ভাগ্যে জোটেনা।

শুধু তাই নয়, গর্ভবতীরাসহ অন্যান্য জটিল রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য কখনোই সেফিক্সিম জাতীয় দামী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এখান থেকে সরবরাহ করা হয়না। জরুরি বিভাগে কাঁটা-ছেঁড়ার রোগী এলে জখমপ্রাপ্ত স্থান অবশ করার জন্য প্রয়োজনীয় চেতনানাশক ওষুধটিও থাকেনা। ফলে প্রায় সব ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।

নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল মাত্র সাত লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ওষুধ ছাড়া জরুরি চিকিৎসার জন্য গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কিনতে হয়।
/
এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তারা বছরে মাত্র ৫ লাখ টাকার ওষুধ কিনতে পারেন। বাজেট অপ্রতুলতার কারণে প্রয়োজনীয় সব ওষুধ কেনা সম্ভব হয়না। রোগীর সংখ্যানুপাতে কমপক্ষে বর্তমান বাজেটের তিন-চারগুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শনিবার সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে- প্রতিদিন গড়ে শতাধিক নিম্নআয়ের রোগী বিশেষ করে গার্মেন্টস কর্মীরা এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ খোলা থাকে।

৪ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ ২৫ জন চিকিৎসক, ৭ জন নার্স, ২২ জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও)সহ আগত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জনবল রয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্টাফরা যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়ে আগত নারী, পুরুষ ও শিশু রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। একজন রোগীকে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে চারটি ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। দেখা যায় এর ৩টি ওষুধেরই সরবরাহ নেই।  

দরিদ্র রোগীদের অনেককেই কেনার সামর্থ নেই জানিয়ে যে কোনোভাবে বিনা পয়সায় সরকারি ওষুধ দেয়ার জন্য চিকিৎসকের কাছে কাকুতি-মিনতি করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, হতদরিদ্র রোগীদের জন্য খারাপ লাগলেও তারা কিছু  করতে পারেন না। তারা বলেন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার রোধসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবায় বাংলাদেশ বিশ্বের বহুদেশে রোলমডেল বিবেচিত হলেও বাস্তবতা হলো এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গর্ভবতী কোন মা দামী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ পাননা। অনেক সময় প্যারাসিটামল ওষুধের সরবরাহও থাকেনা।

শনিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে একজন চিকিৎসক ড্রাগ স্টোরে খোঁজ  নিয়ে জানান, বর্তমানে প্যারাসিটামল ও কোন ব্যথার ওষুধের সরবরাহ নেই।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীদের বেশিরভাগ নিম্নআয়ের। জ্বর, পাতলা পায়খানা, ব্যথা ও চুলকানিতে ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু ওষুধের স্বল্পতার কারণে সিংহভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে খেতে বাধ্য হন তারা।

শনিবার দুপুর ১২টায় থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন বছরের শিশু মোস্তাকিমের  মায়ের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, শিশু মোস্তাকিম অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসকরা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হিসটাসিন ট্যাবলেট লিখেছেন।তাদের কাছে এ মুহূর্তে সরবরাহ নেই বলে বাইরে থেকে কিনে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

এ সময় একাধিক রোগী জানান- এখানকার ডাক্তার, নার্সরা খুব ভাল কিন্তু ভাল কোন ওষুধ নেই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) মো. শরাফত হোসেন বলেন, রোগীর তুলনায় তাদের বাজেট খুবই অপ্রতুল। তাই সব সময় সব ওষুধ পাওয়া যায়না। যখন যে ওষুধ সরবরাহ থাকে তখন সেই ওষুধই রোগীদের বিনামূল্যে দেয়া হয়। বর্তমানে প্যারাসিটামল ও ব্যথানাশক ও দামী কোন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সরবরাহ না থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করলেও সব সময়ে সরবরাহ না থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন।

এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি