হামলার ধরণ একই হলেও পাল্টেছে সময় ও স্থান
সরাসরি খুনের উদ্দেশ্যে আক্রমণ। আক্রমণে আক্রোশও আগের মতো। ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারও একই। এলোপাতাড়ি কোপ মাথা, ঘাড় ও গলায়। কিন্তু এবার হামলার সময় বদলেছে। বদলেছে আক্রমণের স্থানও। সরাসরি বাসায় গিয়ে হামলা। লোকালয়ের ভেতরে ব্লগার নীলান্দ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় ওরফে নীলকে হত্যার ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা বেছে নিয়েছে জুমা’র নামাজের সময়। যে সময়ে পুরো ফ্লাট ছিল পুরুষশূন্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সদস্যরা বলছেন, হত্যার কৌশল হিসেবে ওই সময় বেছে নিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। হত্যা করে নির্বিঘ্নে বেড়িয়ে যেতেই খুনিরা ওই সময়টাকে ‘পারফেক্ট’মনে করেছিল।
গত শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর উত্তর গোড়ানের নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি কোপে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ব্লগার নীলান্দ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয় (২৭)।
ডিবির পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, খুনিরা বেশি সময় নেয়নি। খুনের আগে তাদের পরিকল্পনা ছিল বলেই ঘটনাস্থলে তারা ‘সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় নিয়েছে। আর এই তিন মিনিটের মধ্যেই তারা অপারেশন চালায়।’ তিনি জানান, খুনিদের হাতে মোবাইল ছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়।
৩০ এপ্রিল সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এ ঘটনার একমাস না পেরুতেই সিলেটে অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তায় একই স্টাইলে খুন হন আরেক মুক্তমনা ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার। এসব হত্যাকাণ্ডে গলার উপরের অংশ মুখ, মাথা ও ঘাড় ছিল হামলাকারীদের লক্ষ্যবস্তু।
গোয়েন্দা সদস্যরা বলছেন, আগের সবগুলো ঘটনাতেই আক্রমণে একই স্টাইল ছিল। চোরাগুপ্তা ওই সব হামলা ছিল রাস্তায়। তবে এবার ব্লগার নিলয়কে হত্যা করা হল তার বাসায় ঢুকে। তাও আবার জুমার নামাজের সময়। এ ঘটনায় থানা পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত এবং অনুসন্ধান শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম শাখার যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এ ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজের সময় দুপুর সোয়া ১ টা থেকে পৌনে ২টার মধ্যে ৪-৫ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত নিলয়ের বাসায় ঢুকে। তারা পেছন থেকে এসে ঢুকে রাম দা’র মতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়, গলা ও মাথায় আঘাত করে।’
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ধরণ দেখে এটা স্পষ্ট যে এটি পূর্বপরিকল্পিত। আঘাতের পর নিলয় যেন কোনভাবেই বাঁচতে না পারে তাই তার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে আঘাত করা হয়েছে।’
ডিএমপি’র এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, এর আগের যে সব ঘটনা ঘটেছে সেসব ক্ষেত্রেও হামলার ধরণ একই ছিল। কিন্তু এবার সময়ও বদলেছে। বদলেছে হামলার স্থানও। নিলয় হত্যার ক্ষেত্রে কৌশলী আচরণ করেছে খুনিরা। জুমার নামাজের সময় বেছে নিয়েছে তারা। জুমার নামাজের সময় সাধারণত ধর্মপ্রাণ মুসলমান বাসিন্দারা ঘর থেকে বেড়িয়ে মসজিদে যান। আর এই সুযোগটাই নিয়েছে খুনিরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিলয় হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ এখনো খুনিদের সনাক্ত কিংবা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
যদিও ব্লগার নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশের (এআইকিউএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। ওই সংগঠনটির মুখপাত্র মুফতি আবদুল্লাহ আশরাফের ইমেইল থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা হয়। তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আনসার আল ইসলামের দায় স্বীকারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জেইউ/এসএইচএস/আরআইপি