হেলমেট ও মুখে কাপড় বেঁধে সাংবাদিকদের ওপর হামলা
মাথায় হেলমেট ও মুখে কাপড় বেঁধে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে রোববার দুপুরে এই হামলা চালায় একদল যুবক। এতে বার্তাসংস্থা এপির ফটোসাংবাদিক এএম আহাদ, জনকণ্ঠের জাওয়াদ, বণিক বার্তার পলাশ, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমেদ দীপ্তসহ বেশ কয়েকজন আহন হন। এ ছাড়া, হামলার মুখে পড়েন জাগো নিউজের ফটোসাংবাদিক বিভাষ দিক্ষিৎ বিপ্লব। তার ক্যামেরাও কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।
গুরুতর আহত ফটোসাংবাদিক আহাদকে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আহাদকে বেধরক পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে একদল যুবক। যাদের দুজনের মাথায় হেলমেট পরা। আর একজনের মুখে গামছা বাঁধা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলা টানা অষ্টম দিনের আন্দোলনের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গেলে এ হামলা চালানো হয়। এতে এপির ফটোসাংবাদিক এএম আহাদ গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে সহকর্মীরা গেলে হামলাকারীরা তাদের ওপরও ইটপাটকেল ছুড়ে। এতে আরও কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
কয়েকজন ফটোসাংবাদিক জানান, ছবি তুললেই মারধর করা হচ্ছে, মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে এবং তা পুলিশের উপস্থিতিতেই।
এমন হামলা সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাংবাদিকরা। তারা প্রশ্ন রাখছেন, গণমাধ্যমকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে? গেল দুই-তিনদিন ধরে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে ক্যামেরা, গাড়ি। করা হচ্ছে মারধরও।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামলাকারীদের খোঁজা হচ্ছে। হামলার সময় যদি তথ্য দেয়া হতো তাহলে তাদের আটক করা যেতো।’
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে কালশি ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। তখন পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই বাসটি ওঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন। এ ছাড়া আহত হয় আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী।
নিহত দুজন হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
ওই ঘটনায় গত রোববার রাতেই নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৩। এ ঘটনায় জাবালে নূরের তিনটি বাসের তিন চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করে র্যাব।
আন্দোলনে নেমে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি করে শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে, নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদের নিতে হবে, শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
জেডএ/আরআইপি