ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানোর তথ্য স্বীকার করেছে নওশাবা
রুদ্র নামে এক স্কুল ছাত্র মোবাইলফোনের মাধ্যমে নওশাবাকে জানায় জিগাতলায় নিহতের খবর। এরপরই উত্তরার একটি শ্যুটিংস্পট থেকে ফেসবুক লাইভে যান তিনি। মোবাইলফোনে শোনা কথাগুলোই ফেসবুক লাইভে বলার পর সবাইকে রাস্তায় নেমে আসারও আহ্বান জানান নওশাবা। মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানোর বিষয়টি র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন কাজী নওশাবা আহমেদ।
রাতে র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, জিগাতলার ঘটনা নিয়ে নওশাবা ফেসবুক লাইভে গেলেও ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। ছিলেন উত্তরার একটি শুটিং স্পটে। সেখান থেকেই মোবাইলফোনে আসা খবরে তিনি ফেসবুক লাইভে যান। তিনি ফোনে যা শুনেছেন তাই ফেসবুক লাইভে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার সেই গুজব মুহূর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যে কারণে দ্রুত গুজব আরও ছড়িয়ে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে নওশাবা র্যাবকে জানিয়েছে, রুদ্র নামে একটা ছেলের সাথে গত ৩ আগস্ট তার পরিচয় হয় শাহবাগে। তারপর থেকে রুদ্রের সাথে তার যোগাযোগ হয় এবং চলমান আন্দোলন সম্পর্কে আপডেট জানতে পারে। সেই সূত্রে রুদ্রের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার নওশাবা ফেসবুক লাইভে যায়। প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই বলাটা শুধু গুজব নয়, অপরাধ। তথ্যদাতা সেই রুদ্র একটি স্কুলে পড়ে বলে জানিয়েছেন নওশাবা।
মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, তাকে (নওশাবা) আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নওশাবা ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়িয়ে যে অপরাধ করেছে সে অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার এ প্রধান কর্তা আরও বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুরাতন ঘটনার ফুটেজ নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করারও পায়তারা চলছে। এসব ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য আছে। গুজব ছড়ানোর ঘটনায় আরও যারা জড়িত আছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এর আগে শনিবার রাতে নওশাবাকে উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে র্যাব-১ ব্যাটালিয়ন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত সাড়ে ১০টার দিকে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আনা হয় নওশাবাকে। এরপরই আটক নওশাবাকে গ্রেফতার করার কথা জানায় র্যাব।
শনিবার বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে জিগাতলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় দুই ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার খবর জানান কাজী নওশাবা আহমেদ।
শনিবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ের কর্মীদের সংঘর্ষ বাধার পর জিগাতলা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে হেলমেট পরা একদল যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়লে অভিনেত্রী নওশাবা বিকেল চারটার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন।
লাইভ ভিডিওর শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ বলছি, আপনাদেকে জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
সকলকে এক হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই এক সাথে হোন। ওদের প্রটেকশন দিন প্লিজ। বাচ্চাগুলো আনসেইফ অবস্থায় আছে। আপনারা রাস্তায় নামেন প্লিজ।’
আন্দোলনকারী ছাত্রদের রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নওশাবা বলেন, ‘যদি সরকার প্রটেকশন দিতে না পারে, তবে মা-বাবা হয়ে, ভাই-বোন হয়ে ছেলে-মেয়েগুলোকে প্রটেকশন দিন, এটা আমার রিকোয়েস্ট।’
যে ছাত্রটির চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সে জিগাতলা হাইস্কুলের দাবি করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এদেশের নাগরিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে রিকোয়েস্ট করছি, জিগাতলায় স্কুলের ছেলের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে।”
ছাত্রলীগ এই হামলা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটু আগে অ্যাটাক করেছে, ছাত্রলীগের ছেলেরা। তারা জিগাতলায় আছে। আপনারা এখনই নামবেন, আপনাদের বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবেন। ট্রাফিক যে পুলিশরা আছেন, প্লিজ আপনারা নিজের দেশের বাচ্চাদের প্রটেকশন দেবেন। কিছু একটা। সরকার যদি দায়িত্ব নিতে না পারে, তবে জনগণ কিসের জন্য আছি আমরা? আমরা ৭১ দেখেছি, বায়ান্ন দেখেছি, আমরা এবারও পারব।’
জেইউ/এসআর