ঢাকার রাস্তায় বাস নেই
দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। আন্দোলনের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বেশকিছু পরিবহন ভাঙচুর ও আগুনে লাগিয়ে দেয়ার পর ‘নিরাপত্তা’র অজুহাতে গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীসহ সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা।
এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আজও ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। গতকাল রাতে চললেও আজ সকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে দূরপাল্লার বাস চলাচলও। রাজধানীতে সকাল থেকে গণপরিবহন বলতে শুধুমাত্র বিআরটিসি ও ট্রাস্ট পরিবহনের বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। রাস্তা অবরোধ করে। টানা আন্দোলনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবহনে ভাঙচুর চালায়, আগুন লাগিয়ে দেয়। সময় গড়িয়ে তা আরও বড় আকার ধারণ করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বাইরের বিভাগ ও জেলা শহরেও।
শনিবার সকাল থেকে রাজধানীজুড়েই পরিবহন সংকট দেখা যায়। প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে পড়া মানুষ ও অফিসগামী মানুষ পরিবহন না পাওয়ায় পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বা সিএনজি, রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা যায়। অনেককে আবার বেসরকারি কাভার্ডভ্যান ও পিক্যাপে চড়েও গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
মোহাইমিনুল ইসলাম জুয়েল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, কলাবাগানে অফিস। আন্দোলন ও ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবহন বলতে শুধু সিএনজি মিলছে। কিন্তু কল্যাণপুর থেকে কলাবাগনে ভাড়া চাইছে ৪শ’ টাকা। বাধ্য হয়ে উবারে নয় তো পাঠাও সার্ভিসে অফিস যাচ্ছি। সেখানেও অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে।
মহাখালী রেলগেট এলাকায় বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজারও যাত্রী। কিন্তু কোনো পরিবহন নেই। সেখানে কথা হয় যাত্রী নাছিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, উত্তরায় অফিস। যথাসময়ে অফিস যাওয়া তো সম্ভব হবেই না। শেষঅবধি যেতে পারবো কি-না তাই ভাবছি। বিআরটিসি দুটো চলে গেল সামনে দিয়ে। কিন্তু ওঠার উপায় নেই। মানুষ যাচ্ছে বাদুরঝোলা হয়ে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, অঘোষিতভাবেই বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত না। অনিরাপদ মনে করায় পরিবহন বন্ধ রেখেছেন মালিকপক্ষ।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ও অনিরাপদ হলে কী করে রাস্তায় বাস নামাবো? পরিস্থিতি দেখছি। সবার মধ্যে আতঙ্ক। একটা বাস পুড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতি তো ভাই আমাদেরই নাকি? স্বাভাবিক হলে পরিবহন চলাচলও স্বাভাবিক হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বাস মালিকরা সমর্থন করলেও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে তারা চিন্তিত।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঘটনার পরপর পরিবহনে ভাঙচুর শুরু হয়। আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চারশর মতো বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। ৮টির মতো বাস পেট্রল ঢেলে সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারণে মালিকরা যানবাহন নিয়ে ও শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সে জন্যই যানবাহন নামছে না।
জেইউ/বিএ/পিআর