নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে শহরজুড়ে বাস বন্ধ
সড়কে বাস চলাচল নিরাপদ নয়- এমন কারণ দেখিয়ে ঢাকা শহরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। সড়কে চলছে তাদের অঘোষিত ধর্মঘট। এদিকে রোববার কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার পঞ্চমদিনের মতো সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
অবশ্য, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আজ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তারপরও বিভিন্ন সড়কে ইউনিফর্ম পড়েই শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
আজ সকাল থেকে রাজধানীর সব রুটে বাস চলাচল একেবারে সীমিত। কোনো কোনো রুটে বাস চলেইনি। পরিবহন মালিকদের দাবি, রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত তাদের প্রায় শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও ছয়টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় তারা বাস বন্ধ রেখেছে।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে বাস বন্ধ করার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। কিন্তু গতকাল যে পরিস্থিতি দেখলাম, অনেক ভাঙচুর চলছে। সড়কে বাস নিরাপদ নয়। তাই মালিকরা নিজ নিজ ইচ্ছায় বাস বন্ধ রেখেছে।
এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে বুধবার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এবং ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট করে বাসের ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স যাচাই শুরু করেন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সার্জেন্টরা। বৃহস্পতিবার এই অভিযান আরও বৃহৎ আকারে চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) প্রবীর কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সড়কে সার্জেন্ট দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করিয়ে থাকি। এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। এরই অংশ হিসেবে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সার্জেন্টরা এই কাজ করছেন।
বাস বন্ধের কারণ কি মোবাইল কোর্ট? এই প্রশ্নের জবাবে রুস্তম আলী বলেন, ‘মোবাইল কোর্টতো নিয়মিত হয়, এটাতে কোনো সমস্যা নেই। রাস্তায় বাসের নিরাপত্তা নেই বলেই মালিকরা বাস নামাচ্ছে না।’
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর চত্বর থেকে জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত জানান, সকাল ৮টা থেকে মিরপুরের কয়েকটি সড়ক ঘুরে হাতেগোণা কয়েকটি বাস দেখা গেছে। বাস না পেয়ে অফিসগামী লোকজন পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
উত্তরা থেকে জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন জানান, উত্তরার জসিম উদ্দিন থেকে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরিবহন বলতে শুধুমাত্র প্রাইভেটকার, সিএনজিনচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের দেখা মিলছে। আর দু’একটি বিআরটিসি বাস চলতে দেখা যাচ্ছে। এর বাইরে বেসরকারি কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি।
তবে মগবাজার এলাকায় হাতেগনা কয়েকটি ‘৬ নম্বর’ বাস চলতে দেখা যায়।
জাগো নিউজের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও গাবতলীতে সড়কে নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা ঢাকার ভেতর কোনো বাস ঢুকতে দিচ্ছেন না।
এদিকে বাসচালকদের ‘প্রতিহিংসার শিকার’ হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে সাধারণ জনগণ। গুলিস্তান থেকে গুলশান-২ নম্বরে যাবেন, শেখ সম্রাট নামে এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাস মালিকরা কোনো ঘোষণা না দিয়েই ধর্মঘট করেছে। আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো প্রস্তুতি নিতে পারতাম। এটা নিশ্চিত যে বাস মালিকরা প্রতিহিংসার কারণে এই ধর্মঘট ডেকেছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চলমান থাকুক। আমরা পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে রাজি আছি, কিন্তু মরতে রাজি নই।’
এদিকে বাস সঙ্কটের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের রাইডার ও ড্রাইভারদের সংখ্যাও কমে গেছে। শামীম আহমেদ নামে পাঠাওয়ের একজন রাইডার জাগো নিউজকে বলেন, অধিকাংশ সড়কেই শিক্ষার্থীরা ঢুকতে দেয় না, যানজট থাকে। তাই আমি সন্ধ্যার পর বের হই।
গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী।
চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
দুর্ঘটনার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সড়কে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলন করছে তারা।
এদিকে রোববার ও সোমবার র্যাবের পৃথক অভিযানে রেষারেষিতে অংশ নেয়া জাবালে নূরের ৩ বাসের চালক ও দুই হেলপারকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ঘাতক বাস চালক মো. মাসুম বিল্লাহকে (৩০) ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। বাকি ৪ জন হেলপার মো. এনায়েত(৩৮), গাড়ির চালক মো. জুবায়ের(৩৬) এবং চালক মো. সোহাগ (৩৫) ও হেলপার রিপনকে(৩২) কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এআর/জেইউ/এএস/এনএফ/আরআইপি