জাবালে নূরের মালিক গ্রেফতার
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জাবালে নূরের ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ (যে বাসচাপা দেয়) বাসের মালিক মো. শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার তাকে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, বিস্তারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী।
চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
এ ঘটনায় দিয়ার বাবা রোববারই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িত চালকের বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রোববার থেকেই আন্দোলনে নামে ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
চারদিন ধরে চলা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
অপরদিকে গ্রেফতার জাবালে নূর গাড়ির চালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার গাড়ির চাপাতেই ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়।
শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি জানিয়েছিল। তাদের এই দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দাবিগুলো বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত নথি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বুধবার রাজধানীর শাহবাগসহ ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিরপুর ১০ নম্বর চত্বরে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়। দুপুর সোয়া দুইটায় বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) ও ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। এ ছাড়া মহাখালী-গুলশান ১ নম্বর সড়কে অবস্থান করে ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা।
আর শান্তিনগর ও বেইলি রোডের সড়কে অবস্থান নেয় ভিকারুননেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ছাত্রীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কাকরাই থেকে মালিবাগের সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
বুধবার পুরো ঢাকা অচল করে ফেলে শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেয়া যায়, যাত্রাবাড়ী, বিমানবন্দর, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্পটে ৫-৬ জন শিক্ষার্থী গ্রুপ করে চালকের লাইসেন্স যাচাই করছিল। এ সময় মোটরসাইকেলে ৩ জন বসা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের নামিয়ে দিতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তরায় সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একটি বাস থামিয়ে ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চায়। তবে ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে তারা বাসটিকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে। বাসের ডানপাশে স্প্রে রং দিয়ে ‘লাইসেন্স নাই’ লিখে দেয়।
এদিকে শনি আখড়ার দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া দেয় সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, তারা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। পুলিশ তাদের কিছুই বলেনি। এ ছাড়া শনি আখড়ায় একটি পিকআপ চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের গুঞ্জনে আবারও উত্তাল হয় রাজপথ।
এআর/জেডএ/এমএস